নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০১:০৩

হাওরে বাঁধ নির্মাণে এবারও বিলম্ব

বন্যার পানি হাওরে ঢুকে যাতে ফসল তলিয়ে না যায়, এজন্য প্রতি বছর নির্মাণ করা হয় হাওর রক্ষা বাঁধ। শুষ্ক মৌসুমে চলে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ। এ বছর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করার কথা। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জে হাতেগোনা দু-তিনটি ছাড়া কোনো হাওরেই বাঁধের কাজ শুরু হয়নি।

সুনামগঞ্জে হাওরে বাঁধ নির্মাণের জন্য এবার ৭০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কথা। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেশির ভাগ উপজেলায় কোনো কমিটিই গঠন করা যায়নি, কাজ শুরু তো অনেক দূর। কাজ শুরু করতে বিলম্বের কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিলম্বে শুরুর কারণে শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে দায়সারাভাবে কাজ শেষ করার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৬০টি পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ করার কথা। তবে এখন পর্যন্ত একটি পিআইসিও গঠন করা হয়নি ওই উপজেলায়।

এ উপজেলার সাচনাবাজার এলাকার কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিই গঠন করা হয়নি। কবে কমিটি গঠন হবে আর কবে বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে তা বুঝতে পারছি না। এভাবে শুরুতেই গড়িমসি করলে পরে আমাদের ফসল নিয়ে বিপদে পড়তে হবে।

উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, পিআইসি গঠনের জন্য আমরা সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছি। এমপি মহোদয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি দু-একদিনের মধ্যে এলাকায় আসবেন। এলেই কমিটি গঠন করা হবে।

এদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কমিটি গঠন হয়েছে। যদিও ওই কমিটি এখনো অনুমোদন পায়নি বলে জানান উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. আশরাফুল সিদ্দিকী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় ৪২টি হাওরে এ বছর প্রাথমিকভাবে ৮৫৬ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে। এগুলো নির্মাণ করতে ১১ উপজেলায় প্রায় ৭০৪টি পিআইসি গঠন করার কথা। জেলায় বাঁধ নির্মাণে প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয় ৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। গত বছর বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৯০ কোটি টাকা। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, হাওর থেকে এবার পানি নেমেছে দেরিতে। এখনো কয়েকটি হাওরে পানি রয়েছে। ফলে বাঁধ নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি দ্রুত নামছে না বলে জানান তারা।

২০১৭ সালে সঠিক সময়ে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ বোরো ফসল। সরকারি হিসাবে, ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪ হাওড়ের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায় ওই বছর, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল। যদিও কৃষকদের হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় দ্বিগুণ।

ওই দুর্যোগের ফলে ২০১৭ সাল থেকে বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে কৃষকদের সংশ্লিষ্ট করে পিআইসির মাধ্যমে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় পিআইসির সভাপতি থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আর জেলায় জেলা প্রশাসক। তবে প্রতিবারই নির্ধারিত সময়ে পিআইসি গঠন নিয়ে দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। ফলে বাঁধ নির্মাণকাজও পিছিয়ে যাচ্ছে।

দ্রুত বাঁধের কাজ শুরুর দাবিতে গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ শহরে মানববন্ধন করে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন বলেন, এখনো পিআইসি গঠন করা হয়নি। বাঁধের কাজও শুরু হয়নি।

তিনি বলেন, হাওরের পানি না নামার কারণে বাঁধের কাজ শুরুতে বিলম্বের কথা বলছেন পাউবো কর্মকর্তারা। তবে পানি দ্রুত নামার জন্য কোনো উদ্যোগ তারা নেননি। এভাবে বসে থাকলে তো কোনো সমাধান হবে না। কারণ ফেব্রুয়ারি থেকে এ এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময়েই দেখা দেয় অকাল বন্যা।

তবে নির্ধারিত সময়েই বাঁধের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান। তিনি বলেন, গত বছরও জানুয়ারির দিকে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়েছে। এবারো সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

কাজ শুরুতে বিলম্বের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার হাওরের পানি দেরিতে নেমেছে। এ কারণে সঠিক সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব ছিল না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত