নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:৩৭

বেতন পাচ্ছেন না সিলেটের বেসরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকরা

এপ্রিল মাসের বিশ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন পাননি সিলেটের বেশিরভাগ বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা। করোনা সঙ্কটের অজুহাতে শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। বেতন চাইলে অনেকক্ষেত্রে শিক্ষকদের অপদস্থ এবং হুমকি প্রদানেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেতন না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন কলেজগুলোর শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সিলেটে অর্ধশতাধিক বেসরকারি কলেজ রয়েছে। অর্ধশতাধিক কলেজের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগই এখন পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেনি।

করোনাা সংক্রমণের প্রভাবে ১৭ মার্চ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে বেসরকারি কলেজগুলোতেও ছুৃটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে এগুলো বন্ধ রয়েছে।

সিলেটের অন্তত সাতটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখন পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন পাননি তারা। বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানিয়ে এই শিক্ষকরা বলেন, অনেক কলেজ বেতন চাইলে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছে। বেতন না পাওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন



একাধিক শিক্ষক বলেন, বেতন চাইলে কয়েকটি কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে আগে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন আদায় করে দিতে বলছে।

বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষও বেতন না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, ছাত্র বেতন না পাওয়া, অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা না থাকাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তারা বেতন দিতে পারছেন না। এদিকে বেতনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তর।

সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার শাহজালাল সিটি কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলেজের বেতনই আমার আয়ের একমাত্র উৎস। অথচ এপ্রিলের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন পাইনি। তাই বাসা ভাড়া দেওয়াসহ পরিবারের খরচ মেটানো নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।

তিনি বলেন, মার্চ মাসের শিক্ষার্থীদের বেতন কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই মাসের ৭ তারিখেই আদায় করে নিয়েছে। অথচ আমাদের দিচ্ছে না। অন্যান্য সময়ে মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন হয় বলে জানান তিনি।

নগরীর জালালাবাদ কলেজের এক শিক্ষক বলেন, আমাদের অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি অর্ধেক নিয়ে টালবাহানা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন



তিনি বলেন, সামনে রোজা আসছে। বাজারে জিনিসপত্রের দামও বেশি। এই অবস্থায় বেতন না পেলে পথে বসতে হবে। এছাড়া করোনার কারণে এখন টিউশনি করেও বাড়তি কিছু আয় করার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালালাবাদ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল বাকী চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শাহজালাল সিটি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ভাষ্কর রঞ্জন দাশ বলেন, কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্র বেতন আদায় করা যাচ্ছে না। তাই শিক্ষকসহ স্টাফদের বেতন দেওয়া যায়নি। তবু কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে। আশাকরছি দুএকদিনের মধ্যে বেতন হয়ে যাবে।

নগরীর গ্রিনহীল স্টেট কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, কলেজ বন্ধ থাকায় বেতন দিতে পারছি না। আমাদের অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সিস্টেম নেই।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। মুহিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের অধীনে সিলেটে ৪টি বেসরকারি কলেজ রয়েছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের মার্চের বেতন যথাসময়ে প্রদান করা হয়েছে জানিয়ে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান বলেন, মার্চের ১৭ তারিখ পর্যন্ত তো শিক্ষকরা কলেজে কাজ করেছেন। এই মাসের বেতন না দেওয়ার তো কোনো কারণ নেই। ছাত্র বেতন না আসলেও দুতিন মাস ব্যয় চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য সব প্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত। এই সময়ে বেতন আটকানো খুবই অমানবিক।

বিজ্ঞাপন



কলেজগুলোর বেতন না দেওয়ার প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক হারুনুর রশীদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চি মাদ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সিলেটের কলেজ পরিদর্শক মেয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সব কলেজেরেই যথাসময়ে শিক্ষকদের বেতন প্রদান করার কথা। তবে বেতন না দেওয়া কোনো অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত