তাহিরপুর প্রতিনিধি

২৮ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:২৮

দ্রুত ধান কাটছেন কৃষক, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা

হাওরাঞ্চলে এবার বাম্পার ফলন হলেও করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার আগাম সতর্কবার্তার মাইকিং আর প্রশাসনের ধান কাটার জন্য জোড় তাগাদায় অনেকটা ভয়ে দ্রুতই কাঁচা-পাকা ধান কাটছেন কৃষক। ফলে ধান কাটতে গিয়ে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন কৃষকগণ। তবে ফলন ভাল হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।

এদিকে জেলা প্রশাসন গত কয়েকদিন যাবত জেলায় অতিবৃষ্টি এবং নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্ভাবাস দিলেও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ২৩টি ছোট বড় হাওরে ১৭ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমিতে ইরি বোর ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। সেই সাথে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৫৮ মেট্রিক টন।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, হাওরে ইতিমধ্যে কৃষক বিভিন্ন হাওরে ব্রি আর ২৮ জাতের ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। ব্রি আর ২৯ ধান পাকতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যে ২৯ ধান কাটাও শেষ হয়ে যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা জানান, ৭০ শতাংশ ধান পেকে গেলে তা কেটে ফেললে ধানের তেমন ক্ষতি হয় না।

তবে কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা।

উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সোলাইমানপুর গ্রামের কৃষক আহমেদ জামিল শনি হাওরে বোরো ধান চাষাবাদ করেন। তিনি জানান, ব্রি আর ২৮ ও ২৯ ধান কাঁচা থাকলে তা শুকিয়ে বস্তাবন্দী করে রাখলে পোকায় ধরে।

একই কথা জানালেন উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ারপাড়ের কৃষক আলম মিয়া। শুধু পোকায় নয় কাঁচা ধান কাটালে ফলন থেকে প্রতি কেদারে ১ থেকে ২ মন ধান কম হবে বলে একাধিক কৃষকের অভিমত।

কৃষক শফিক মিয়া জানান, এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কাটা হয়েছে। আর বেশী কাটা হয়েছে ব্রি আর ২৮ ধান। ব্রি আর ২৯ পাকতে আরো সপ্তাহখানেক লাগবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ধান কেটে শুকিয়ে ঘরে তুলতে পারবো।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, উপজেলার প্রতিটি হাওরে ব্রি আর ২৮ ও ব্রি আর ২৯ ধান রোপণ করেছেন কৃষক। ব্রি আর ২৮ ধান কাটা প্রায় শেষ। ব্রি আর ২৯ পাকতে আর কয়েকটা দিন লাগবে।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর অল্প কয়দিনের মধ্যেই তাহিরপুরের প্রায় শতভাগ ধান কাটা সম্ভব। জেলায় ছোট বড় ২৩টি হাওরে হাওরের ৪৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আর সপ্তাহ-দশদিন ধান কাটতে পারলেই তাহিরপুর উপজেলার কৃষক প্রায় শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জি বলেন, সরকারিভাবেই দ্রুত ধান কাটার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। আমরা হাওরে হাওরে ঘুরে কৃষকদের বুঝিয়ে দ্রুত পাকা ধান কাটার কথা বলছি। বর্তমান করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের হুমকি রয়েছে। এ হুমকি মোকাবিলায় বোরো ধান আমাদের কিছুটা সহায়ক হবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় দ্রুত ধান কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। প্রাকৃতিক কোনও প্রকার দুর্যোগের পূর্বেই আশা করি কৃষক ধান কাটতে পারবেন। আমরা সব সময় কৃষকের পাশে আছি।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত