সবুজ পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ভেসে চলা কার্পাশ তুলোর মতো মেঘ, ঝর্ণার জলে এলিয়ে দেয়া নাগরিক জ

০৫ আগস্ট, ২০১৫ ০৯:০৯

ভরা যৌবনের হাকালুকি: ঘুরে আসুন বর্ষায়

মারূফ অমিত

বর্ষা এবং শীত উভয় ঋতু'ই সিলেটে ঘুরাফেরার জন্য উপযোগী সময়। অন্যান্য দর্শনীয় জায়গাগুলোর সাথে আপনি প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি থেকে।

হাকালুকি হাওর, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। হাওরটি ৫টি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত। হাওরের ৪০% বড়লেখা, ৩০% কুলাউড়া, ১৫% ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০% গোলাপগঞ্জ এবং ৫% বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। এই হাওরের আয়তন ২০,৪০০ হেক্টর। ২৩৬টি বিল নিয়ে এই হাকালুকি হাওর। বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওরের এক অনবদ্য রূপ। চারদিকে শুধু পানি আর পানির খেলা। সে এক অপরুপ দৃশ্য। শীতকালে তার অন্যরূপ। শীতকালে অতিথি পাখিরা সারি বেঁধে পাশবর্তী দেশ থেকে আসতে থাকে বিলগুলোতে। এইসব পরিযায়ী পাখিদের আগমনে হাওর যেন পরিণত হয় স্বর্গোদ্যানে। আর এ সময় অতিথি পাখিদের সাথে মিতালি গড়তে মানুষের কলকাকলিও বাড়ে হাওর পারে।

হাওরের বিলগুলোতে র‌য়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তার মধ্যে রয়েছে, আইড়, চিতল, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈসহ আরও নানা প্রজাতির।

হাকালুকি হাওরের নামকরণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কথিত আছে, বহু বছর পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কালক্রমে ওই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি। এও বলা হয় যে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’। আরও শোনা যায় যে,এক সময় বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে একটি উপজাতি বাস করত। হেংকেলদের বসবাস এলাকার নাম ছিল ‘হেংকেলুকি’। পরবর্তীতে এই হেংকেলুকিই ‘হাকালুকি’ নাম ধারন করে। অন্য একটি জনশ্রুতি মতে, এক সময় হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি বসবাসরত কুকি ও নাগা উপজাতি তাদের ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’। হাকালুকি অর্থ লুকানো সম্পদ।

সিলেটে পর্যটন সম্ভাবনার স্থান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তীরবর্তী ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। এখান থেকেই বিস্তৃত জলরাশির হাকালুকি হাওর দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩টা ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ট্রেনের ভাড়াপ্রকারভেদে ১২০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। ট্রেনে গেলে রাত ৯.৫০টার উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়াটাই সব চেয়ে ভালো। এছাড়া বাসেও যাওয়া যাবে। বাসে যেতে চাইলে অনেক বাস আছে। এর মধ্যে শ্যামলি, হানিফ, সোহাগ, ইউনিক, উল্লেখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে রাত ১২.৩০টা পর্যন্ত এসব বাস পাবেন। বাসে যেতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৪ ঘন্টা ৩০ মিনিট। ননএসি ৩০০/৩৫০ টাকা। এসি ৯০০ টাকা পর্যন্ত।

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। সিলেট হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে বাস, সিএনজি অথবা লেগুনা করে মাইজগাঁও বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে পুনরায় সিএনজি যোগে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে গেলেই হাকালুকি হাওর ভ্রমণ করা যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকার মত খরচ হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত