নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ)

২০ আগস্ট, ২০১৭ ১৫:৪৮

আত্রাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর আত্রাই (ছোট যমুনা) নদীতে বন্যার পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলের জমি। পানিতে ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। 

উপজেলার মালিপকুর, পাঁচুপুর বেড়ি বাঁধ, পাঁচুপুর-সিংড়া সড়ক, উপজেলার হেলিপ্যাড থেকে আত্রাই উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক ভেঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। পানি দ্রুত সরিয়ে না যাওয়ার কারণে দিন দিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চরম আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার বাসিন্দারা। এদিকে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সাত দিন অতিবাহিত হলেও এখনো মেরামত করা হয়নি এই ভাঙ্গনস্থান গুলো।

জানা গেছে, নওগাঁর আত্রাই নদীতে পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে গত ১৩ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলার ফুলবাড়ি, পূর্বমিরাপুর, উদনপৈয়, মিরাপুর, রসুলপুর, জাতোপাড়া, জিয়ানিপাড়াসহ প্রায় এক শত অধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। আত্রাই থেকে আত্রাই-সিংড়া সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এই বন্যার পানির কারনে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শতাধিক পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আতঙ্কে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

রবিবার (২০ আগস্ট) সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বন্যাকবলিত পরিবার গুলো আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকের অভিযোগ ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রেও স্বজন প্রীতি করা হচ্ছে। আর যে পরিমাণ ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের চাইতে খুবই প্রতুল। দিনমজুরেরা কাজ পাচ্ছে না। তাই তারা নিজের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। আর যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম অনেক বেশি। তাই গবাদিপশুলোকে বাঁচানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন জানান, উপজেলায় বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ফসলের অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ার কারনে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ফসলের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলায় ধান সহ বিভিন্ন ফসলের প্রায় ১০হাজার ৪শত ১৩ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। যদি মাঠের পানি সাতদিনের মধ্যে নেমে যায় তাহলে জমিতে আবার স্বল্পকালীন বিভিন্ন প্রজাতির ধান লাগানোর সুযোগ পাবেন কৃষকরা। তবে কৃষকদের প্রতিনিয়তই বন্যা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: রুহুল আমিন আল-ফারুক জানান, বন্যায় মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই গো-খাদ্যের অভাবের কারণে লোকসান দিয়ে পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। বন্যায় গবাদি পশুকে কিভাবে ভালো ও সুস্থ রাখা যায় তার পরামর্শ প্রতিনিয়তই প্রদান করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলো আমাদের লোকজনরা প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণ করছেন ও গোবাদি পশুগুলোর খোঁজখবর রাখছেন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে ত্রাণ বিতরণ করা শুরু হয়েছে। সরকারি দপ্তর ছাড়াও বিভিন্ন দল ও সংগঠনগুলো বন্যাকবলিত এলাকায় সাধ্যমতো ত্রাণ বিতরণ করছেন। পর্যায়ক্রমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারের পক্ষ থেকে সাধ্য মতো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত