অনলাইন ডেস্ক

১০ মে, ২০২০ ১২:৩৬

বৃদ্ধ মাকে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় ফেলে যান সন্তানরা!

প্রশাসনের সহায়তায় ফিরে পান আবাসন

পঞ্চগড়ের ৯৫ বছরের বৃদ্ধা ইশারন নেছা। পায়ে আঘাত পাওয়ায় হাঁটাচলাও করতে পারতে না। ভিক্ষাও করতে পারতেন না। তাই ইশারন নেছাকে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় ফেলে যান সন্তানরা। খবর পেয়ে সেই অসহায় এই মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবিনা ইয়াসমিন। ওই বৃদ্ধাকে তার সেজ মেয়ে আজিমা খাতুনের বাড়ি পাখোরতলা গ্রামে থাকার ব্যবস্থা করে স্থানীয় প্রশাসন।

শনিবার (৯ মে) ডিসি সাবিনা ইয়াসমিন ওই বৃদ্ধাকে দেখতে যান। তিনি তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিশেষ উপহার সামগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, তেল, নুডুলসসহ শুকনো খাবার, একটি স্থায়ী ঘরের জন্য ঢেউটিন ও নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। জেলা প্রশাসক তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং আঘাত পাওয়া পায়ের উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ মে) ইশারন নেছাকে তার সেজ মেয়ের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করানো হয়।

জানা গেছে, ইশারন নেছার স্বামী মজত আলী মারা যান মুক্তিযুদ্ধের পরপরই। ৫ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মারা গেছেন। বাকি ৪ মেয়ে বিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। ৩ মেয়ে স্বামীর বাড়ি মির্জাপুর ইউনিয়নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি স্বামীর ভিটায় থাকতেন। সৎ ছেলেদের একজন তাকে দেখভাল করতেন। সেই সন্তান মারা গেলে সবকিছু বিক্রি করে একই ইউনিয়নের পাখোরতলা এলাকায় সেজ মেয়ে আজিমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। ১৫-১৬ বছর ধরে সেখানে থেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাসখানেক আগে এক মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পিছলে পড়ে পায়ে আঘাত পান তিনি। তারপর থেকে আর হাঁটতে পারেন না। এই অবস্থায় মাকে টানতে না পেরে মেয়ে আজিমা তাকে রেখে আসে সৎ ভাই জাহিরুলের বাড়িতে। একমাস যেত না যেতেই তারা আবার ইশারন নেছাকে রেখে আসেন আজিমার বাড়িতে। কয়েকদিন পর আজিমা আবার রেখে আসে জাহিরুলের বাড়ি।

একপর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে অভাবের তাড়নায় তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে রেখে চলে যায়। রাত হলেও তাকে কেউ বাড়িতে না নেওয়ার স্থানীয় কয়েকজন যুবক তার খাবারের ব্যবস্থা করেন। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী বৃদ্ধাকে মেয়ে আজিমার বাড়িতেই পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।

ইশারন নেছা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের জন্য দোয়া করেন। টিন, টাকা ও খাদ্য সামগ্রী পেয়ে তিনি অনেক খুশি হয়েছেন।

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর আলী জানান, ওই বৃদ্ধা তার সবকিছু বিক্রি করে সব টাকা পয়সা নিয়ে মেয়ে আজিমার বাড়িতে উঠেন। ভিক্ষা করে যা পেতেন সব মেয়েকে দিয়ে দিতেন। পায়ে আঘাত পেয়ে এখন ভিক্ষা করতে পারেন না তাই তাকে তার মেয়ে আর রাখতে চাইছে না। আমরা প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে পারি। কিন্তু দেখভালের দায়িত্ব তো তাদেরই নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধাকে তার মেয়ের বাসায় রেখে আসা হয়েছে।

ডিসি সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ওই বৃদ্ধার বিষয়টি আমার কানে আসার পরই আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে খোঁজ খবর নেই। তাকে তার মেয়ের বাসায় রাখার ব্যবস্থা করি। ওই বৃদ্ধার জন্য খাদ্য সামগ্রী, স্থায়ী বাসস্থানের জন্য ২ বান টিন ও নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। প্রয়োজনে তাকে আরও খাদ্য সামগ্রীসহ আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। তার সন্তানরা যেন বৃদ্ধার দেখাশোনা করেন সেজন্য তাদের বুঝিয়ে বলেছি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত