সদেরা সুজন, কানাডা

২৭ এপ্রিল, ২০১৭ ১৫:৩১

কানাডায় প্রবাসী বাঙালিদের মাসব্যাপী বর্ষবরণ ও মিলনমেলা

বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ কে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এবং দেশের আমেজে বরণ করে নিয়েছেন কানাডার বিভিন্ন শহরে বসবাসরত প্রবাসীরা। পুরো মাসব্যাপী চলছে প্রতিটি শহরে কোনো না কোনো সংগঠনের ব্যানারে বর্ষবরণের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানমালা।

প্রতিটি অনুষ্ঠানেই প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ  বিভিন্ন সংগঠন প্রবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি দেশ থেকে নিয়ে এসেছেন নামি-দামি কন্ঠশিল্পীদেরকে। বর্ষবরণকে ঘিরে চলছে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে উপলক্ষ্য করে টরন্টোর এলডন রোড সংলগ্ন পার্কিং লটের দেওয়ালে বাংলা সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে বর্ণাঢ্য ম্যূরাল আঁকা হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল থেকে প্রতিটি উইকএন্ডে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান লেগেই আছে, যা চলবে ৬ মে পর্যন্ত।

কানাডার অটোয়ায়​বিপুল উৎসাহ​-​উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ কে স্বাগত জানিয়েছে​বাংলাদেশ হাইকমিশন। বর্ষবরণের লক্ষে দূতাবাসের উদ্যোগে নগরীর​ঐতিহ্যবাহী ব্রন্সন সেন্টারে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে অটোয়া, টরন্টো ও মন্ট্রিয়েল থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি যোগদান করেন। কানাডা ও অন্যান্য দেশের অতিথিরাও আসেন এ বৈশাখী মেলায়।

বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ কে স্বাগত জানিয়ে ও মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বাঙালী সংস্কৃতি এবং আমাদের দেশজ কৃষ্টিকে তুলে ধরা এ বৈশাখী মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য। এতে স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের জন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, কানাডার মতো এই দূর প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারে বাংলা নববর্ষ উদযাপন ও বৈশাখী মেলার আয়োজন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে বাঙালি সংস্কৃতিকে উৎসাহ দান ও সম্প্রসারণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্ববান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী বাংলা গান ও সুরের ঝংকারে সুস্বাদু বাঙালি খাবারের আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়।

বৈশাখী মেলার স্টলগুলোর অন্যতম ছিলো 'Movement for Deportation of Killer Nur Chowdhury' আন্দোলন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষে মেলায় আগত অতিথিদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহের অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সোমা সাইফুদ্দিন। বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম স্টলে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ, বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য, পর্যটন, গ্রাম-বাংলার জীবন, পালা-পার্বন ও উৎসবের প্রতীকসমৃদ্ধ বিভিন্ন স্মারক ডিসপ্লে করা হয়। হাইকমিশনের দ্বিতীয় স্টলে অতিথিদের দেশীয় বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়নও করা হয়।

গত ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখে মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিনে কানাডার বিভিন্ন শহরে হাইকমিশন আয়োজিত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত নির্বাচিত চিত্রকর্মের প্রদর্শনী মেলায় যোগ করে বাড়তি আকর্ষণ​, যা মুগ্ধ করে আগত অতিথিদের।

বিভিন্ন পসরা নিয়ে সাজানো স্টলগুলোর মধ্যে ছিলো এ্যালাইভ এডুকেশন (বিকল্প শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠান), বাংলা ক্যারাভান, কবি-লেখক মোহসীন বখতের বইয়ের সংগ্রহ, নার্গিস বুটিক, ফিউশন বুটিক​এবং 'ডানা'স কুইসিন' (বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় খাবারের দোকান)।

অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বের আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিনী নিশাত রহমান। 'Bangabandhu, The Greatest Leader' বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় 'ক' গ্রুপে (বয়স ৫-১০) প্রথম হয় তাসমিয়াহ খান, দ্বিতীয় দেওয়ান ফাতিমা সাইয়িদা এবং তৃতীয় আরিয়ানা আলিশা চৌধুরী। 'খ' গ্রুপে (বয়স ১১-১৬ বছর) প্রথম হয় সন্দীপন সাহা, দ্বিতীয় ওয়াফা ইসলাম এবং তৃতীয় ফাইকা শিকদার।

মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন​সাখাওয়াত হোসেন (বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব)​, রিজওয়ানা আলমগীর, শিশির শাহনেওয়াজ এবং শিশু শিল্পী তাথৈ। সমবেত কন্ঠে 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো' এবং "টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল' গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় শিশু শিল্পী এ্যালিসিয়া, ইস্টি, আলিনা, ওয়াজিদ এবং চন্দ্রিমা। হারমোনিয়াম ও নির্দেশনায় ছিলেন ডালিয়া ইয়াসমীন​ আর ​তবলায় ছিলেন শুভঙ্কর। কবিতা আবৃত্তি করেন গিয়াস ইকবাল সোহেল এবং শিশু আবৃত্তিকার সানোভা। নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন কারিনা দত্ত এবং শিশু নৃত্যশিল্পী লারিসা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ। সার্বিক নির্দেশনায় মিনিস্টার নাইম উদ্দিন আহমেদ এবং সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনায় প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভুঁইয়া। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবারের সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অতিথিদের স্বাগত জানান এবং কুশল বিনিময় করেন।​

বাংলাদেশ হিন্দু এ্যাসোসিয়েশন অব ক্যুইবেক, মন্ট্রিয়লের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ বর্ষবরণ উপলক্ষে মন্ট্রিয়লের সনাতন ধর্ম মন্দিরে গত ১৫ এপ্রিল শনিবার রকমারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে গনেশ পূজার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হয় আর বিকেলে মন্দির প্রাঙ্গণে মেলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুভ নববর্ষ উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান মন্দিরের পুরোহিত শ্রী রীতীশ চক্রবর্তী।

বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্বগুলো উপস্থাপনা করেন শর্মীলা ধর, শক্তিব্রত হালদার মানু ও অনিন্দিতা রায় মিথিলা। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিশু শিল্পী ‘ঝুন ঝুন ময়না’ (নাচ), রিশিতা ও রুদ্রানি, ‘তোমরা কুঞ্জ  সাজাও গো’ (নাচ)-, ভাবনা ও ব্রিয়া ‘মায়াবন বিহারিণী আমি নই’ (নাচ), স্বাগতা ও সুমিতা ‘নিশা লাগিল রে’ (নাচ), অহনা, স্বাগতা, রামিয়া, শতরূপা ও পর্ণিকা’র অসাধারণ নৃত্য ছিলো উপভোগ্য।

তারানা সুদেষ্ণা মৌলিক এর পরিচালনায় ক্লাসিক্যাল নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী, অণুষ্কা রায়, অণুষ্কা চক্রবর্তী ও ইশা ধোতে। দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে শিশু শিল্পী উৎসব ও ঈশান। গান পরিবেশনায় আরো ছিল মিত্তি, মোহিনী, প্রিয়ঙ্করী ও পৌলমী। একক সংগীত পরিবেশন করেন তৃপ্তি দাস, তৃপর্ণা দে, শ্যামন্তি কর্মকার, মধুমিতা দে, পূরবী হালদার, পাপড়ি মিত্র, গৌতম মিত্র, সুজাতা দেব, পুষ্পিতা দেব, সঞ্জীব কুমার দেব, সঞ্চিতা মজুমদার, সৌমিত্র কর সুমন, শর্মিষ্ঠা দেব ও মুনমুন দেব, শর্মিলা ধর, রাখি চক্রবর্তী, লাকি চৌধুরী, অনিন্দিতা রায় মিথিলা, মুন দেব রায় ও কেয়া দত্ত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত