সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০৮

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি পর্যবেক্ষক

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারি একজন পর্যবেক্ষক রাখার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান।

রোববার (৩১ জুলাই) ইউজিসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।

তিনি জানান, বিদ্যমান আইন সংশোধন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারি একজন পর্যবেক্ষক রাখা হবে।

এছাড়া সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগ তদারক করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেরাও সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ি পালিয়ে জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে তথ্য আসায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সরকার ও অভিভাবক মহলে।

সোমবার (১ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস বা পার্শ্ববর্তী স্থানে এক ঘণ্টার জঙ্গিবাদ বিরোধী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও তাতে যোগ দিতে পারবে। দেশের ৪৫ লাখ মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক মান্নান।

তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদের তথ্য বের করার মেকানিজম নেই। কোনো সেল বা বিশেষায়িত বিশেষজ্ঞ ইউজিসিতে নেই, আইন অনুযায়ী এটা আমাদের কাজও না। আইন ঢেলে সাজানোর জন্য বহুদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে।

“এখন যেহেতু জঙ্গিবাদ একটা সমস্যা, এটি নিয়ে আর লকোচুরির ব্যাপার নেই। আর্থিক ও অ্যাকাডেমিক বিষয়ের পাশাপাশি এ ধরনের বিষয়ের জন্য একটি সেল গঠনের চিন্তা করতে হবে।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরিবর্তনের জন্য যে কমিটি করে দিয়েছে তাতে ইউজিসি চেয়ারম্যানও রয়েছেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “অবশ্যই (ব্যবস্থা) নেব। শুধু নর্থ সাউথ না, নর্থ হোক আর সাউথ হোক, বেসরকারি হোক আর সরকারি হোক জঙ্গিবাদ ইজ জঙ্গিবাদ।”

“যেখানেই থাকুক, জঙ্গিবাদ সরকার, জনগণ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদের চর্চা হোক।”

এর আগে ইউজিসির পরিদর্শন দল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের বই পেয়েছিল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিল ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

অধ্যাপক মান্নান বলেন, “মন্ত্রণালয় গত ডিসেম্বরে এক মাসের সময় দিয়ে (নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষকে) বিষয়গুলোর জবাব দিতে বলেছিল। এক মাস সময় জানুয়ারিতে শেষ হয়ে গেলেও তারা জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।”

গত ১৪ জুলাই নর্থ সাউথ ‘দায়সারা গোছের’ একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক মান্নান বলেন, “গুলশানের ঘটনা না ঘটলে, তাদের নাম প্রকাশ না পেলে হয়তো তারা এটা দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করত না।”

আগের ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ইউজিসির তদন্ত কমিটির আবারও নর্থ সাউথে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, “তাদের কাছে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেনি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার জন্য এক মাস সময় চেয়েছে।”

ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক (জনসংযোগ) মো. ওমর ফারুক জানান, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগ তদারকির জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, তার নেতৃত্বে থাকছেন কমিশনের সদস্য মো. আকতার হোসেন। কমিশনের উপ-পরিচালক জেসমিন পারভিন ও উপসচিব শাহেদ সিরাজ সদস্য হিসেবে ওই কমিটিতে থাকছেন।

“এই কমিটি যে কোনো সময় যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারবে,” বলেন ওমর ফারুক।

সম্প্রতি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাসও বন্ধ ঘোষণা করেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত