নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ মে, ২০১৭ ০০:৪৩

শাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য, ‘সুইসাইডাল নোট’ উদ্ধার

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুস্তাকিন রাজ্জাক মামুর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। তার মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বুধবার সকালে ফেঞ্চুগঞ্জে রেললাইনের পাশ থেকে আহত অবস্থায় মুস্তাকিনকে উদ্ধার করে স্থানীয় জনতা। পরে ওসমানী হাসপাতলে নিয়ে আসলে তার মৃত্যু হয়।

মুস্তাকিনকে উদ্ধারের স্থান থেকে একটি সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে ওই নোটটি আদৌ মুস্তাকিনের লেখা কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, মোস্তাকিনের সহপাঠীরা জানিয়েছেন মঙ্গলবার থেকেই নিখোঁজ ছিলেন মোস্তাকিন। তবে এ ঘটনায় বুধবার রাত পর্যন্ত মোস্তাকিনের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।


সিলেট রেলওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গির আলম জানান, ফেঞ্চুগঞ্জে যে স্থান থেকে মোস্তাকিনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে একটি সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ইংরেজিতে লেখা ওই নোটের বেশিলবাগই পাঠোদ্ধার করা যায়নি। তবে 'আজকেই আমার শেষ দিন' এমন একটি লাইন লেখা রয়েছে ছোট ছোট সেই কাগজগুলোতে।

তিনি বলেন, এগুলো মুস্তাকিনেরই লেখা কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ওসি জানান, এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে।

নিহত মুস্তাকিন রাজ্জাক মামুর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক চিকিৎসক ও বর্তমানে সিলেট নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের চিকিৎসক ডা: আব্দুর রাজ্জাক এবং সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের একই বিভাগের চিকিৎসক ডা: হোসনে আরার ছেলে। তাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বুধবার (১৭ মে) সকালে ঢাকাগামী কালনী ট্রেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জস্থ মাইজগাও রেলওয়ে স্টেশন ত্যাগ করার পর স্টেশনের পাশ থেকে চিৎকার শুনে স্থানীয় জনতা তাকে দেখতে পেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, বুধবার সকালে কালনী ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর স্টেশনের পাশে চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস থেকে পরে গিয়ে তার মৃত্যু হতে পারে। বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ তদন্ত করবে বলে জানান তিনি।

নিহত মামুরের পরিবার সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা বলে বের হন মামুর। পরে রাতে বাসায় ফিরে না গেলে পরিবারের সদস্যরা তাকে সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে বন্ধ পান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, মামুর ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরবর্তীতে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে পুনঃভর্তি হয়। কিন্তু তার সহপাঠীরা স্নাতকোত্তর পর্বে পড়াশোনা করলেও সে এখনো স্নাতক পর্যায়ের এক তৃতীয়াংশ ক্রেডিট সমাপ্ত করেনি এবং বিভাগেও অনিয়মিত ছিলো। এবিষয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে অবগত হয় বলেও জানিয়েছে বিভাগ।

এ বিষয়ে শাবি প্রক্টর জহির উদ্দীন আহমেদ জানান, নিহত মামুর দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিল। মৃত্যুর ধরণ নিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ বলতে পারবে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত