রাবি প্রতিনিধি

১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ১৬:৩৮

রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ইয়াবা চক্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন, দাবি ছাত্রলীগের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগ।

তারা সংবাদ মাধ্যমে এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ সময়।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীসহ ৩৪ জন ইয়াবা ব্যবসা চক্রে শনাক্ত বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখা। প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হয়ে ৭ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের (আরএমপি) হাতে পৌঁছেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ওই ধরনের কোনো গোপন প্রতিবেদন পাননি বলে জানান রাজশাহী মহানগরের পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ইফতেখার আলম।

এছাড়া এ বিষয়ে ৮ নভেম্বর রাজশাহীতে গণমাধ্যমকে দেয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, 'এ ধরনের তালিকা আমরা তৈরি করিনি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে মাদকাসক্তের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশ করেনি। এটা কোথায় পেল আমি জানি না।'

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন পাননি বলে জানান রেজিস্ট্রার ড. মো. এম এ বারী।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ওই গোপন প্রতিবেদনে রাবির ছয় শিক্ষক, আট কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১১ ছাত্রলীগ নেতা, তিন সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ছয় সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ রয়েছে।

এছাড়া ওই গোপন তালিকায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে এক শিক্ষক, দুই ছাত্রী ও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামও রয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলভুক্ত পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরও (পাবিপ্রবি) চার কর্মকর্তার নামও ইয়াবা চক্রের তালিকায় উঠে এসেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তবে এই গোপন প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনের মধ্যে।

সংবাদ সম্মেলনে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, '৯ নভেম্বর কিছু কিছু ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১১ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা চক্রের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার যে অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।'

'সেই সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, কিছু শিক্ষককেও এর মধ্যে জড়ানো হয়েছে। আমরা মনে করি, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র এ রকম হীন ও ঘৃণ্য কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে না।'

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন যদি ঠিক থাকে তাহলে ওই প্রতিবেদন তৈরির পেছনে কার হাত রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রাবি উপাচার্যের প্রতি অনুরোধ জানান।'

তিনি আরো বলেন, 'সরকারকে বিব্রত করতেই ওই ধরনের প্রতিবেদন করা হয়েছে। এটি একটি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে অভিযুক্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, 'আমি যতদূর জানতে পেরেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন করেনি। এছাড়া আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাজশাহী মহানগরেও খোঁজ নিয়েছি, তারা এটা পাননি। তাই এটা আমার কাছে ভিত্তিহীনই মনে হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আর এটা যদি হয়েই থাকে, তবে কার মাধ্যমে এ প্রতিবেদন হয়েছে। তারা কী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এটা করেছে নাকি সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে এটা করেছে। তারা কোনো ষড়যন্ত্র করে এটা করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে অনুরোধ করছি।'

সংবাদ সম্মেলনে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এহসান মাহফুজ, সাদ্দাম হোসেন, মাহফুজ আল আমিন, মিজানুর রহমান সিনহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান মিশু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত