সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ মে, ২০২৪ ১৯:০৯

...অথচ মিশা-ডিপজলকে ফুলের মালা দিয়েছিলেন নিপুণ

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছিল গতবার। এবার নির্বাচনের পর বিজয়ী প্যানেলকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলেন পরাজিত পরাজিত নিপুণ আক্তার। সময়ের ব্যবধান এক মাসেও পৌঁছায়নি, এবার নির্বাচন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের মেযাদের নির্বাচন। এতে নিপুণ ও মাহমুদ কলি প্যানেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মিশা-ডিপজল প্যানেল। সারা দিন ভোট গ্রহণ শেষে পরদিন ২০ এপ্রিল সকালে ঘোষিত ফলাফলে জানা যায়, নিপুণের প্যানেলের পরাজয় হয়েছে। ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিতও ছিলেন নিপুণ। এরপর তিনি ডিপজল ও মিশাকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। মিশা ও ডিপজল তাদের পরিয়ে দেওযা মালা নিপুণকে পরিয়ে দেন।

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে হেরে সেদিন গণমাধ্যমের কাছে নিপুণ জানিয়েছিলেন, ‘ভেবেছিলাম ডিপজল সাহেবের বিপরীতে আমি যখন দাঁড়াব, ভোট পাব সর্বোচ্চ ৫০টি। সেখানে ভোট পেলাম ২০৯টি। হেরেছি মাত্র ১৬ ভোটে। এতেই প্রমাণিত হলো যে শিল্পী সমিতির ভাইবোনেরা আমাকে কতটা ভালোবাসেন। এত সম্মান দেওযার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ এমনকি সেদিন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওযার জন্য নিজেকেই কৃতিত্ব দেন নিপুণ।

নিপুণের প্রশংসা করে সেদিন মিশা সওদাগর বলেছিলেন, ‘আমরা জিতেছি, এটা বড় কথা নয়, নিপুণসহ তার প্যানেলের সবাই আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা সবাই এক।’ ডিপজলও বলেছিলেন, ‘নিপুণকে আমি এনেছিলাম চলচ্চিত্রে। তাতে হার-জিত বড় কথা নয়। ওকে আমি মেয়ের মতোই স্নেহ করি। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে চাই। কোনো ভাগাভাগি চাই না।’

নির্বাচনের চার সপ্তাহে এসে সব সমীকরণ যেন পাল্টে গেল। নিপুণ করেছেন হাইকোর্টে রিট। আর সেই খবর শুনে মিশা সওদাগর হুংকার ছুড়েছেন। ডিপজল বলছেন, ‘কেস খেলবা আসো। যেটা খেলার মন চায়, সেটাই খেলো।’

রিট করা প্রসঙ্গে এত দিন পর এসে নিপুণ বলছেন, ‘ভোট শেষ হওযার পর সন্ধ্যা সাতটা থেকে নির্বাচন কমিশনের চেযারম্যান ও আপিল বোর্ডের চেযারম্যানের কথাবার্তা রহস্যজনক মনে হয়েছে। তা ছাড়া যতই রাত বাড়ছিল, ততই ভোটকেন্দ্র ও বাইরের পরিবেশ আমার কাছে হুমকিস্বরূপ মনে হচ্ছিল। সেদিনের এমন পরিবেশ আমি আগে কখনো দেখিনি এফডিসিতে। পুরো আঙিনা তারা দখলে নিয়েছিল। ভোটের গণনা শেষ হতে তখনো অনেক সময় বাকি ছিল, কিন্তু তাদের হাবভাবে মনে হচ্ছিল, তখনই তারা পুরো প্যানেল জিতে গেছে। আমি নিজেও নিরাপদ মনে করিনি ভোট গণনার পুরো রাত। তাই আমিসহ আমার প্যানেলের কয়েকজন ১ নম্বর স্টুডিওর মেকআপ রুমে তালা মেরে ভেতরে বসে ছিলাম ভোটের ফলাফল পর্যন্ত।’

রিট করার পেছনে অভিযোগ হিসেবে নিপুণ আরও বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন বাতিল ভোটের সংখ্যা সঠিক দেননি। আমার জানামতে, ৮১টি ভোট বাতিল হয়েছে। কিন্তু তারা ৪০টি ভোট বাতিল দেখিয়েছে। এ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনো কিছুই আমাদের প্যানেলকে জানায়নি নির্বাচন কমিশন।’

তাহলে অনিয়ম জেনেও কেন বিজয়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন—এমন প্রশ্নে নিপুণের বক্তব্য এ রকম, ‘ওই সময় সেটি করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তা ছাড়া মিশা-ডিপজল প্যানেলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন, আপিল বোর্ডের যোগসাজশে ভেতরে-ভেতরে এত বড় অনিয়ম চলে আসছিল, সেটি ফলাফল প্রকাশের অনেক সময় পর স্পষ্ট হয়েছে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার শিল্পী সমিতির নতুন কমিটিকে সংবর্ধনা দিয়েছেন মিশা ও ডিপজল–সমর্থিত শিল্পীরা। এ সময়ে নিপুণের রিট এবং বর্তমান কমিটি নিয়ে তার কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন মিশা ও ডিপজল।

মিশা সওদাগর কারও নাম উল্লেখ না করে দেওযা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিযায় বলেন, ‘যিনি সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছেন, তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝিয়ে দেব শিল্পী সমিতির সংগঠন কী? এবার শিল্পী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কে? এবার শিল্পী সমিতির ক্যাবিনেটটা কী?’

পরিচালক মালেক আফসারী বলেন, ‘আগে এফডিসি থেকে ছবি যেত সিনেমা হলে। এখন এফডিসি থেকে মামলা যায় আদালতে।’ তিনি এমনও বলেন, ‘এফডিসি থেকে রাজনীতি সরান। অটোমেটিক সব ঠিক হয়ে যাবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত