১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ২১:২০
ভারত, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের তিন অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিতে এবারের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দারিদ্র্য বিমোচনের পথ খুঁজতে উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষণার ধরণ বদলে দিয়ে নোবেল পুরস্কার পেলেন এ তিন অর্থনীতিবিদ।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস সোমবার অর্থনীতিতে চলতি বছরের নোবেলজয়ী হিসেবে অভিজিৎ ব্যানার্জি, এস্থার ডাফলো ও মাইকেল ক্রেমারের নাম ঘোষণা করে।
এবার নোবেল পুরস্কারের ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ভাগ করে নেবেন তারা। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
এই খবরের বাইরে আরও খবর হলো অভিজিৎ ও এস্তার ডাফলো সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে এটা কি প্রথম ঘটনা, প্রশ্নটা স্বাভাবিক। তবে উত্তর হচ্ছে- এটা প্রথম ঘটনা নয়, এরআগে একাধিকবার ঘটেছে এমন ঘটনা।
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ২০১৫-তে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এস্থার ডাফলো। তাদের একমাত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল ২০১২-তে। ১৯৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে অর্থনীতিতে পিএইডি করছিলেন এস্থার। সে সময় তার জয়েন্ট সুপারভাইজার ছিলেন অভিজিৎ।
স্বামী-স্ত্রীর যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগের ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালে। জন ও’কিফের সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন নরওয়ের মে-ব্রিট মোজেস ও এডওয়ার্ড মোজেসও। মোজেস দম্পতির এমন কাণ্ডে যারপরনাই আনন্দে ভেসেছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ফুটবলপাগল ওই ছোট্ট দেশটি। একসঙ্গে নোবেল পাওয়া নরওয়ের ওই দম্পতি কিন্তু পড়াশোনাও করেছেন একই হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে সহপাঠী হলেও মে-ব্রিটের সঙ্গে হাইস্কুল তেমন একটা ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি এডওয়ার্ডের। বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়াশোনার সময় থেকে তাদের সম্পর্কের শুরু। পেশাদার জীবনে তো বটেই ব্যক্তিগত পরিসরেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
১৯০৩-তে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন তিন জন। মারি কুরি ও পিয়ের কুরি এবং আতোয়াঁ অরি বেকারেল। সে বছর একটা রেকর্ডও গড়েছিলেন মারি কুরি। তিনিই প্রথম মহিলা সে বছর নোবেল পান। পোল্যান্ডের জন্মানো মারির ফরাসি স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল সড়ক দুর্ঘটনায়, ১৯০৬ সালে। সে ঘটনায় ভেঙে পড়লেও গবেষণা থামাননি মারি। ১৯১১-তে ফের নোবেল লাভ করেন তিনি। এ বার রসায়নে। এখনও পর্যন্ত মারি কুরিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দু’বার নোবেল পেয়েছেন। এবং তা-ও আবার দু’টি ভিন্ন বিভাগে।
মা-বাবার মতোই একই পথের পথিক ছিলেন আইরিন জোলিয়ো কুরি। স্বামী ফ্রেদেরিক জলিয়োর সঙ্গে মিলে নোবেল পেয়েছিলেন ১৯৩৫-এ। মারি ও পিয়ের কুরির কন্যা অবশ্য তা পেয়েছিলেন রসায়নবিদ্যায়। আর্টিফিসিয়াল রেডিও অ্যাক্টিভিটিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য নোবেল পদক পান কুরি দম্পতি। আইরিন জোলিয়ো কুরি তার মায়ের সহকারী হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন প্যারিসের র্যাডিয়াম ইনস্টিটিউটে। পরমাণুর গঠন নিয়ে এই দম্পতির গবেষণা ভবিষ্যতে নিউট্রনের আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
১৯৪৭-এ বার্নাদো আলবার্তো হোসের সঙ্গে মিলিত ভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন কার্ল কোরি ও গার্টি গোরি। কার্ল কোরি ও গার্টি কোরি, দু’জনেই প্রাগের জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই কার্লের সঙ্গে প্রথম দেখা গার্টির। এবং প্রথম দেখাতেই প্রেম। এরপর একসঙ্গে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা। স্নাতক হওয়ার পর বিয়ে করেন তারা। পরে আমেরিকায় পাড়ি দেন গোরি দম্পতি। সেই থেকেই মার্কিন নাগরিক।
সুইডেনের দম্পতি আলভা মিরডাল ও গানার মিরডাল, দু’জনেই সে দেশের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪-এ অস্ট্রিয়ার ফ্রেদেরিক অগাস্ট ভন হায়েকের সঙ্গে যৌথ ভাবে অর্থনীতিতে নোবেল পান গানার মিরডাল। এর আট বছর পর মেক্সিকোর আলফন্সো গার্সিয়া রোবেলসের সঙ্গে শান্তির নোবেল পান আলভা।
আপনার মন্তব্য