অনলাইন প্রতিবেদক

১০ মে, ২০১৬ ০০:৫৩

‘আত্মহত্যার গ্রাম’ বলে ডাকে সবাই!

সে এমন এক গ্রাম যে গ্রামকে সবাই চেনে ‘আত্মহত্যার গ্রাম’ বলে। কারণ আত্মহত্যা এই গ্রামের প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। গত এক বছরে ৩৮১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এখানে। গ্রামে এমন একটিও পরিবার নেই, যাদের কেউ না কেউ আত্মহত্যা করেননি।

ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের একটি জেলা খড়গাঁও। এখানকার একটি গ্রামের নাম বাড়ি গ্রাম। লোকমুখে পরিচিত ‘আত্মহত্যার গ্রাম’ নামে।

ভারতের পিছিয়ে পড়া মোট ২৫০টি জেলার মধ্যে অন্যতম খড়গাঁও। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বাস এখানে। তুলা চাষ এখানকার মানুষের প্রধান পেশা। পানির অভাবে চাষের ক্ষতি প্রায় নিয়মিত ব্যাপার। আর্থিক সমস্যা সারা বছরই এখানকার মানুষের সঙ্গী। সঙ্গে আছে দারিদ্র্য, তার সঙ্গে মিশেছে মাত্রাছাড়া কুসংস্কার ও হতাশা।

এই তিনের মিলেই আত্মহত্যা এমন ভয়াবহ আকার নিয়েছে বাড়ি গ্রামে। এই বছরের প্রথম তিন মাসে ইতিমধ্যেই ৮০টি আত্মহত্যার ঘটনা এখানে ঘটেছে বলে জানিয়েছেন খড়গাঁওর পুলিশ সুপার অমিত সিং।

প্রায় প্রতিদিনই গ্রামের কোনো না কোনো গাছের ডাল থেকে কারোর না কারোর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এই গ্রামে ‘শয়তান’ ভর করে আছে বলে আত্মহত্যার কারণ জিজ্ঞেস করলে অকপট জানিয়ে দেন বাসিন্দারা। এই রহস্যজনক ঘটনার কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।

মনোবিজ্ঞানী ডা. রেড্ডির বলেন, ‘এরকম একটি পিছিয়ে পড়া গ্রামে লোকের হতাশা বা ডিপ্রেশন সম্পর্কে সঠিক ধারণা আছে বলে মনে হয় না। আত্মহত্যার সঠিক কারণ বুঝতে না পেরে গ্রামবাসীরা একে ‘শয়তানের প্রভাব’ বলে মনে করছেন। আর্থিক সমস্যা ছাড়া আরো একটা বিষয় সন্দেহ করছে বিজ্ঞানীরা। তা হল জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিকের প্রভাব।

সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক কীটনাশক ও সার জমিতে খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে এবং সেই সবজি অনেক দিন ধরে খেতে থাকলে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় বলে দাবি মনোবিজ্ঞানীদের। তার থেকেই জন্ম নেয় হতাশা। চীনে কিছুদিন আগে একটি গ্রামে পরপর বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছিল। সেখানকার বাসিন্দাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, জমিতে দেয়া কীটনাশকেই লুকিয়ে আছে সমস্যা। এ গ্রামের ক্ষেত্রেও এমন কিছু হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটনায় খড়গাঁওর কালেক্টর অশোক ভার্মা আত্মহত্যা তদন্তে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমেও এখানকার বাসিন্দাদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। গ্রামে মদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন নারীরা। ‘আত্মহত্যার গ্রাম’ অপবাদটি তুলে দেয়ার জন্য চলছে সব ধরনের চেষ্টা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত