লন্ডন সংবাদদাতা

০৭ এপ্রিল, ২০১৫ ২৩:১৭

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীদের স্ত্রীগণ

কথায় আছে প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনেই রয়েছে একজন দক্ষ, শিক্ষিত আর বুদ্ধিমতি বিদুষী নারীর অবদান l নজরুল বলে গেছেন “তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ? অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।“ এরকম লক্ষ কোটি প্রেরণা দাত্রী মমতাজ রয়েছেন জগত জোড়ে l তাদের মধ্যে থেকে আজকে বলব তিনজন বিদুষী নারীর কথা যাদের প্রেরণা আর সহযোগিতায় তিনজন সফল পুরুষ বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী পদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে পরস্পরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আসন্ন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে।


কনজারভেটিব পার্টির প্রধান ডেভিড ক্যামরন যিনি গত পাঁচ বছর ধরে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। যে পদকে অনেকেই বলে থাকেন প্রেসিডেন্ট ওবামার পরেই পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রভাবশালী পদ। একজন ডেভিড ক্যামরন কে তার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে ১৯৯৬ সাল থেকে অদ্যাবদি যার প্রেরণা সহযোগিতা আর ভালবাসা ছিলো অতুলনীয় তার নাম সামান্থা ক্যামেরন।
বৃটেনের গত পাঁচবছরের ফার্স্টলেডি সামান্থা ১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল ইয়র্কশায়ারের শেফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ইউনিভার্সিটি অফ উয়েস্ট ইংল্যান্ড থেকে চারুকলা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেই শুরু করেন ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১০ সালের ব্রিটিশ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত সেন্ট্রাল লন্ডনের ব্যস্ততম বন্ড স্ট্রিটে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্টেসনার্স স্মিথসন এর ক্রিয়েটিভ ডাইরেক্টর হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

সামান্থা ছিলেন ডেভিড ক্যামরনের বোন ক্লেয়ারের সহপাঠি। যার সুবাদে কোনো এক সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতেই এক হাউস পার্টিতে ডেভিডের সাথে দেখা হয় সামান্থার। সেই দর্শন থেকে প্রেম অতঃপর পহেলা জুন ১৯৯৬ সালে তারা দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।  বর্তমানে চার সন্তানের জননী সামান্থা ব্যবসার পাশাপাশি স্বামীর সাথে কাজ করে যাচ্ছেন কনজারভেটিব পার্টির জন্যে।
১৯৯৭ সালের ব্রিটিশ নির্বাচনে সামান্থা টনি ব্লেয়ারের লেবার পার্টিকে ভোট দিয়েছিলেন বলে চ্যানাল ফোর এর ডকুমেন্টারি তে এক অনুমানের কথা উঠলেও সামান্থা বলেন তিনি কোনদিন লেবার পার্টিকে ভোট দেননি এবং দেবেন ও না।


ব্রিটিশ নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদন্ধি ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ড এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে যার অবস্থান কখনো সমান আবার কখনো সাম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরণের থেকে উপরে। বিশ্বের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করা এই সফল রাজনীতিবিদের সহধর্মিনীর  নাম জাস্টিন থর্নটন যিনি  ১৯৭০ সালে ম্যানচেষ্টারে জন্মগ্রহণ করেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৪ সালে বার-এট-ল সম্পন্ন করা থর্নটন  ২০০০ সালে পাঁচ বছরের জন্যে তত্কালীন লেবার সরকারের বায়োটেকনোলজি এবং এনভায়রনমেন্ট এডভাইজার হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি লেবার পার্টির এনভায়রনমেন্ট ক্যাম্পেইন SERA এর চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন l সহযোগী লেখিকা হিসাবে তাঁর দুটি বই বিশ্ব বিখ্যাত আইনের বই প্রকাশন সুইট এন্ড ম্যাক্সঅয়েল থেকে প্রকাশিত হয় যা ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য পুস্তক হিসাবে পড়ানো হয়।

২০০২ সালে নর্থ লন্ডনে কোনো একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবেশ আইনে দক্ষ জাস্টিন থর্নটনের সাথে দেখা হয় লেবার পার্টির তরুণ নেতা এড মিলিব্যান্ড এর। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গড়ে উঠে সখ্যতা গড়ে উঠে  তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের মার্চ মাসে এনগেজমেন্ট এবং ২০১১ সালের সাতাশ মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে দুই পুত্র সম্তানের জননী জাস্টিন থর্নটন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন স্বামী এড মিলিব্যান্ডকে দশ নাম্বার ডাউনিং স্ট্রিটের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভবনে দেখার জন্যে।


গত টার্মে ব্রিটিশ কোয়ালিশন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিবারেল ডেমক্রেট পার্টির প্রধান নিক ক্লেগ ও রয়েছেন আসন্ন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের আলোচনায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদের ইদুর দৌড়ে পিছিয়ে নেই তিনিও। সদ্য ভেঙ্গে দেওয়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই উপ-প্রধানমন্ত্রী বিয়ে করেন একজন স্পানিশ মহিলাকে যার নাম মরিয়াম গঞ্জালেস যার জন্ম স্পেনের ভাল্লাদলিড প্রভিন্সে ১৯৬৮ সালের একত্রিশে মে। পিতা ছিলেন অল্মেডো শহরের মেয়র। ভাল্লদলিড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক শেষ করে বেলজিয়ামের ব্রুগেসে কলেজ অফ ইউরুপে মাস্টার্স পড়ার সময়ে তার পরিচয় হয় নিক ক্লেগের সাথে। পরিচয় গড়ায় প্রেম পর্যন্ত অতঃপর ২০০০ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অন্য নেতাদের স্ত্রীদের মতো মারিয়াম রাজনীতিতে অতটা জড়িত না হলেও কাজ করে যাচ্ছেন স্বামীর আগামী নির্বাচন প্রচার অভিযানে। নিজে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিক হওয়ায় নিজের স্বকীয়তা রক্ষার জন্য রোমান ক্যাথলিকে বিশ্বাসী মারিয়াম ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নেননি। একজন যেহেতু স্পেন কমনউয়েলথ ভুক্ত দেশ নয় তাই ইউরোপিয়ান মাইগ্রান্ট হিসাবে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেও পার্লামেন্ট নির্বাচনে সহধর্মিনীর ভোট থেকে বঞ্চিত থাকবেন লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির প্রধান নিক ক্লেগ।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত