ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৩ জুলাই, ২০১৫ ১২:২০

গ্রিসকে ইউরোজোনের বাইরে রাখতে চায় জার্মানি

গ্রিসের ভাগ্য নির্ধারণে তৃতীয় দফা আর্থিক পুনরুদ্ধারের (বেইল আউট) প্রস্তাব নিয়ে আহ্বান করা রবিবারের ২৮ জাতির নির্ধারিত সম্মেলন বাতিল করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এ ঘোষণা দেন।

ইউরোজোনের ১৯টি দেশের অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে গ্রিসের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমত তীব্র হয়ে ওঠার মধ্যেই ইইউ এ ঘোষণা দেয়। শনিবার কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় ইউরোজোনের বৈঠক। তবে রবিবার দুপুরে ফের বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রীরা।

এদিকে, আলোচনা ব্যর্থ হলে গ্রিসকে ৫ বছরের জন্য ইউরোজোনের বাইরে রাখতে চায় জার্মানি। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে নতুন করে ব্যাপক চাপে পড়েছে অ্যাথেন্স। খবর :বিবিসি।

ব্রাসেলসে শনিবার শেষ রাতের দিকে ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীদের টানা ৯ ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনা খুবই জটিল হয়ে পড়ে এবং কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। ইউরো গ্রুপের অর্থমন্ত্রীদের প্রধান জেরয়েন ডিসেলব্লোয়েম আলোচনা এখন 'খুবই কঠিন' পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে জানান।

তিনি বলেন, 'আমরা গ্রিসের প্রস্তাব নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করেছি। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রিসের ওপর আস্থা রাখা যায় কি-না তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। আলোচনায় আর্থিক ইস্যু তো ছিলই। তবে আলোচনায় আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।'

এর পর পরই ব্রাসেলসের ২৮ জাতির নির্ধারিত সম্মেলন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় ইউরোজোনের নেতাদের আবারও বৈঠক শুরু হবে। ইউরোজোনের রাষ্ট্রপ্রধানরাও অর্থমন্ত্রীদের এই বৈঠকে এসে যোগ দেবেন এবং শেষ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই আলোচনা চলবে।

আলোচনা ব্যর্থ হলে গ্রিসকে ৫ বছরের জন্য ইউরোজোনের বাইরে রাখতে চায় জার্মানি : ব্রাসেলসের আলোচনা ব্যর্থ হলে গ্রিসকে ৫ বছরের জন্য ইউরো জোনের বাইরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোজোনের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ জার্মানির।

এ সময়ে গ্রিসকে মানবিক ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার কথাও ভাবছে দেশটি। ইউরোজোনের দেশগুলোর মধ্যে গ্রিসের আস্থা হারানোর শাস্তি হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিতে চায় দেশটি। অবশ্য এথেন্স বলছে, তেমন কোনো পরিকল্পনার কথা তাদের জানা নেই।

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের নির্দেশেই বার্লিনের অর্থ মন্ত্রণালয় এই অগ্রিম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনাটিতে দুটি সুযোগ রাখা হয়েছে, হয় গ্রিস সরকারকে ঋণ পরিশোধ করতে ট্রাস্ট ফান্ডে ৫ হাজার কোটি ইউরো রাখতে হবে এবং ব্রাসেলসের হাতে তার প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকবে, না হয় 'সময়-শেষ' হওয়ার ঘোষণা দেওয়া।  এর ফলে ইউরোজোন থেকে গ্রিসকে বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।

গ্রিসের কাছে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিশ্চয়তা চায় ইউরো জোন : গ্রিস সংস্কার কর্মসূচি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে কি-না, সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইউরো জোনের নেতারা। এ বিষয়ে গ্রিসের কাছ থেকে অধিক নিশ্চয়তা চান তারা।

ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গ্রিস যে ঋণের শর্তগুলো পূরণ করবে এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট প্রমাণ দরকার। গ্রিস সরকার চাইছে, এখন তাদেরকে প্রায় ৭ হাজার ৪০০ কোটি ইউরো দেওয়া হোক। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেইল আউট ফান্ড থেকে ৫ হাজার ৮০০ কোটি, আর আইএমএফ থেকে বাকি ১৬ বিলিয়ন ডলার চাইছে দেশটি।

জ্বালানি সহায়তার প্রস্তাব রাশিয়ার : অর্থনীতিকে চাঙা করতে গ্রিসকে সরাসারি জ্বালানি সরবরাহের কথা ভাবছে রাশিয়া। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাকের বরাত দিয়ে এ কথা জানায়।

নোভাক সাংবাদিকদের বলেন, 'জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে গ্রিসের অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে চাইছে রাশিয়া। সে অনুযায়ী গ্রিসে সরাসরি জ্বালানি সরবরাহের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি আমরা।' দুয়েক সপ্তাহের মধ্যেই গ্রিসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌছাতে চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

তবে কী ধরনের জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়া তা স্পষ্ট করেননি নোভাক। তবে গ্রিসের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের এই সময়ে বামপন্থি সরকার রাশিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের জন্য অবমাননাকর বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত