নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ মে, ২০২৪ ১৩:২৩

বলাৎকারে অতীষ্ঠ হয়ে গৃহশিক্ষককে খুন!

ইফতেখার রশিদ মাহি (২২)। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তাকে প্রাইভেট টিউশনি পড়াতেন গৃহশিক্ষক মুক্তারুল হক। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভয়ভীতি দেখিয়ে মাহিকে বলাৎকার করেন মুক্তারুল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে মাহিকে বলাৎকার করে আসছিলেন তিনি। যুবক বয়সে এসেও মাহিকে বলাৎকারের চেষ্টা করেন ওই গৃহশিক্ষক। তাতে রাজি না হওয়ায় মাহির ছোট বোনকে ধর্ষণের হুমকি দেন মুক্তারুল। এর প্রতিশোধ নিতেই মাথায় আঘাত করে গৃহশিক্ষক মুক্তারুলকে হত্যা করেন মাহি।

নিহত মুক্তারুল হক সিলেটের জৈন্তাপুরের তেলীজুরী গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। অভিযুক্ত মাহি একই গ্রামের বজলুর রশিদ শামীমের ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর সোমবার (১৩ মে) পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে মূল আসামি মাহিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন মাহি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) তাকে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মাহি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর সকালে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার তেলীজুরী এলাকায় সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুক্তারুল হকের (৩৬) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের বাবা রহমত আলী বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে জৈন্তাপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কিছুদিন তদন্তের পর তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই সিলেট জেলা।

পিবিআই জানায়, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের পর সোমবার (১৩ মে) অভিযান চালিয়ে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি পোশাক কারখানা থেকে মূল আসামি ইফতেখার রশিদ মাহিকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে মাহি পিবিআইকে জানিয়েছেন, মুক্তারুল তাকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রাইভেট পড়াতেন। তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন তখন থেকে মুক্তারুল তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলাৎকার শুরু করেন। পাশাপাশি অশ্লীল দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। বিভিন্ন সময় বাধা দিলে তাকে ব্লেড দিয়ে দুই উরুতে অসংখ্য জখম করেন। অশ্লীল দৃশ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এবং স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে তাকে দীর্ঘ বছর যাবৎ বলাৎকার করে আসছিলেন গৃহশিক্ষক মুক্তারুল।

জিজ্ঞাসাবাদে মাহি আরও জানান, শেষ পর্যায়ে যুবক বয়সে এসেও তাকে বলাৎকার করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এ সময় মুক্তারুল মাহির নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট বোনকে ‘নষ্ট’ করার হুমকি দেন। সেটি সহ্য করতে না পেরে মুক্তারুলকে খুন করার পরিকল্পনা করেন মাহি।

২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর অতীতের মতো মুক্তারুল মাহিকে তাদের বাড়ির পেছনে বলাৎকারের উদ্দেশ্যে ডাকলে মাহি সন্ধ্যার পর সেখানে যান এবং সেখানে থাকা কাঠ দিয়ে মুক্তারুলের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করেন। এরপর মরদেহ তার বাড়ির রাস্তার পাশে জমিতে টেনে নিয়ে ফেলে দেন। এরপর মাহি বাড়িতে এসে পুকুরে গোসল করে নফল নামাজ পড়ে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের খেলাও দেখেন।

পরদিন তিনি রামপ্রসাদ গ্রামে তার নানাবাড়িতে চলে যান। এর কিছুদিন পর খালার বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। এরপর আর এলাকায় আসেননি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র উপপরিদর্শক ঝলক মোহন্ত বলেন, ঘটনার তদন্তভার পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়। পরে সোমবার (১৩ মে) অভিযান চালিয়ে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে মূল আসামি ইফতেখার রশিদ মাহিকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার তাকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত