সিলেটটুডে ওয়েব ডেস্ক

১৬ জুলাই, ২০১৫ ০৪:২৩

যুদ্ধাপরাধ: জার্মানিতে ৯৪ বছর বয়সীর কারাদণ্ড

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার আউশভিৎস নাৎসি বন্দীশিবিরের ‘হিসাবরক্ষক’ ৯৪ বছর বয়সী অস্কার গ্রোয়েনিংকে যুদ্ধাপরাধে কারাদণ্ড দিয়েছে জার্মানির একটি আদালত।

বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ওই ক্যাম্পে অন্তত তিন লাখ ইহুদিকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ মামলার রায় হয়।

‘আউশভিৎসের বুক-কিপার’ নামে পরিচিত জার্মানির নাগরিক গ্রোয়েনিং পোল্যান্ডের আউশভিৎস বন্দিশিবিরে হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। তার কাজ ছিল বন্দি শিবিরটিতে নিয়ে আসা বন্দিদের কাছ থেকে জব্দ করা টাকা-পয়সার হিসেব রাখা।

তিনি নিজে কাউকে হত্যা না করলেও হত্যাকারীদের গণহারে মানুষ হত্যায় সাহায্য করেছিলেন। এপ্রিলে এ মামলার বিচার শুরু হয়। ওই ক্যাম্পে নির্যাতিত বেশ কয়েক তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।

তিনি গণহত্যায় সহযোগিতা করেননি বলে তার আইনজীবীরা দাবি করলেও প্রসিকিউটররা বলেছেন, ক্যাম্পটি ঝামেলাহীনভাবে চালাতে সহযোগিতা করেছেন তিনি।

সাদা চুলের গ্রোয়েনিং নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেছেন। সেইসঙ্গে তিনি এটাও বলেন, তিনি আইনত অপরাধী কি না সেই সিদ্ধান্ত আদালত নেবে।

এ মাসের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, তিনি শুধু ঈশ্বরের কাছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের কাছে তার ক্ষমা চাওয়ার কোনো অধিকার নেই।

এত বেশি বয়সী অস্কারকে কারাগারে পাঠানো হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সর্বশেষ নাৎসিদের মধ্যে তিনি অন্যতম হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর লুয়েনেবার্গে এই বিচার কাজ হয়। রায় ঘোষণা করে বিচারক ফ্রাঞ্জ কোমপিচ বলেন, গ্রোনিং ইচ্ছাকৃতভাবে একটি ‘নিরাপদ ডেস্ক জব’ নিয়েছিলেন এমন একটি ব্যবস্থায় যা ছিল ‘অমানবিক এবং মানুষের অসহনীয়’।

রায় ঘোষণার পর লিও সোয়ার্জবাম নামে আউশভিৎস থেকে বেঁচে আসা একজন বলেন, তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার জন্য তিনি কখনই গ্রোয়েনিংকে ক্ষমা করতে পারবেন না।

১৯২১ সালে জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনিতে জন্মগ্রহণকারী গ্রোয়েনিং প্রথমে হিটলারের তরুণ বাহিনী এবং পরে ওয়াফেন এসএসে যোগ দেন। ২১ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে আউশভিৎসে কাজ শুরু করেন তিনি।

আউশভিৎসে ট্রেনে করে শিবিরে আসা বন্দিদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র সংগ্রহ করা ছাড়াও তাদের নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করতেন গ্রোয়েনিং। মাঝে মাঝে ওই সব বন্দিদের সেখান থেকে সরাসরি গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে দেয়া হত।

১৯৪৪ সালের মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়ার ঘটনার ভিত্তিতে গ্রোয়েনিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে ১৩৭টি ট্রেনে করে প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ইহুদিকে হাঙ্গেরি থেকে আউশভিৎস শিবিরে আনা হয়। তাদের মধ্যে অন্তত তিন লাখ ইহুদিকে সরাসরি গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে হত্যা করা হয়।

নাৎসি অধিকৃত পোল্যান্ডের আউশভিৎস-বারকেনাউ ক্যাম্পে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়, যাদের অধিকাংশই ইউরোপীয় ইহুদি। এছাড়া রোমা (জিপসি) প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সমকামী, ভিন্ন মতাবলম্বী, অন্যান্য পোলিশ ও সোভিয়েত বন্দিদের হত্যা করা হয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত