নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ মে, ২০২৪ ১২:৪২

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ থেকে ৪৩ বছর আগে এই দিনে দেশে ফেরেন। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার দীর্ঘ ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি।

নির্বাসন জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার এই দিনটিতে শেখ হাসিনাকে ঢাকায় বরণ করে নেয় লাখো জনতা।

এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিনটি (১৭ মে) স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। এদিকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক। তার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।’

একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার নির্মমতায় প্রাণ হারান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। সে সময় বিদেশে (ইউরোপ) অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। নিরাপত্তার প্রয়োজনে ভারত সরকার দুই বোনকে দ্রুতই দিল্লিতে নিয়ে আসে। এরপর তাদের ঠাঁই হয় দিল্লির সুরক্ষিত এলাকা পান্ডারা রোডের একটি ফ্ল্যাটে।

ভারতে নির্বাসনে থাকার সময় ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ মে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির মদদে তখন আওয়ামী লীগ ছিল কোন্দলে জর্জরিত। সেই অবস্থায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আসেন। তার অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হলে নেতা-কর্মীরা নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি দিল্লিতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

এর তিন মাস পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। এদিন বিকেল সাড়ে চারটায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিমানে প্রথমে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা আসেন তিনি। বিমানটি কলকাতা থেকে উড়ে রাজধানী ঢাকার তৎকালীন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখানে বিপুল জনতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায়। ঝড়-বৃষ্টিময় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়ও তাকে বরণ করতে বিমানবন্দর অভিমুখে ছিল লাখো জনতার স্রোত। তাদের হাতে ছিল দলীয় পতাকা। তারা মিছিল-স্লোগানে প্রকম্পিত করেছিল ঢাকার রাজপথ। বিশেষ করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে শেরেবাংলা নগর এবং সেখান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ছিল আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি।

সাড়ে চারটায় (৪টা ৩২) বিমান থেকে নামলেও শেরেবাংলা নগরে এসে পৌঁছতে শেখ হাসিনার সময় লাগে তিন ঘণ্টা। এখানে তখন লাখো জনতা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখা ও তার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল। তাকে দেওয়া সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা শেরেবাংলা নগরের জনসভায় বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’ সেই উত্তাল জনসমুদ্রে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার আর হারাবার কিছু নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলসহ সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।’

সেই থেকে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে দেশের ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে শক্ত হাতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। আজ সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে যাবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। বিকেল সাড়ে তিনটায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন। আলোচনায় অংশ নেবেন জাতীয় নেতা ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা।

এ ছাড়া শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রয়েছে বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচি। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় আয়োজন করেছে প্রার্থনা সভার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত