আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১২:৫৬

পুলিশ কমিশনারের পাশে আছেন মমতা

কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে আজ মঙ্গলবারও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। মমতাকে সমর্থন জানাতে কলকাতায় এসেছেন বিহারের আরজেডি দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব ও ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি।

মমতা ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের পাশে আছেন।

পুলিশ-সিবিআই দ্বন্দ্বে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন গরম। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাসভবনে বিনা নোটিশে সিবিআই কর্মকর্তাদের ঢোকার চেষ্টার প্রতিবাদে মমতা গত রোববার রাত থেকে মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান করছেন।

সিবিআই বলছে, পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর সারদা ও রোজভ্যালি দুর্নীতি মামলার তথ্য জানার জন্য তারা কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জেরা করার উদ্যোগ নিয়েছিল।

মমতা অবস্থান মঞ্চ থেকে সচিবালয়ের সব কাজ করছেন। মন্ত্রিসভার সভা করছেন। নির্দেশ দিচ্ছেন। পুলিশের পদক দেওয়া অনুষ্ঠানও করছেন।

মমতা সোমবার বলেন, ‘আমি চিরকাল যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কাজ করেছি। কী করবে ওরা? ৩৫৫, ৩৫৬ জারি করবে? আমার কাছে আছে ১৪৪ ধারা। নো এন্ট্রি বোর্ড লাগিয়ে দেব। আর যারা বলে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নেই, তাদের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেওয়া দরকার।’

পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সমর্থন করে মমতা বলেন, ‘রাজীব কুমার একজন সৎ অফিসার। বিশ্বের অন্যতম সেরা অফিসার। রাজীব কুমারসহ এই রাজ্যের সব পুলিশ আমার গর্ব। আমার এই রাজ্যের পুলিশ রাজ্য ও দেশের সম্পদ। ৯৯ শতাংশ পুলিশই ভালো।’

তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যের পুলিশ অফিসার যদি অসম্মানিত হন, দোষ না থাকলেও দোষী সাব্যস্ত হন, প্রমাণ ছাড়া বাড়িতে গিয়ে যদি গ্রেপ্তার করতে চায়, তার প্রতিবাদ করতেই হবে। তারা যেন এটা না ভাবেন যে তারা দিল্লির বড় নেতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজীব কুমার চোর? আমি চোর? কার টাকা নিয়েছি? কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এসব বললে আমি নিশ্চয়ই আমার পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়াব।’

মমতার অবস্থান কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করতে সোমবারই কলকাতায় এসেছেন বিহারের আরজেডি দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব এবং ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি।

অবস্থান মঞ্চে এসে তেজস্বী যাদব বলেছেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের খেলায় মেতেছে বিজেপি। বিজেপির এই প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা মমতার পাশে আছি।’

ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি বলেছেন, মমতার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার জন্য তিনি সুদূর চেন্নাই থেকে ছুটে এসেছেন। তিনি চান মমতার পাশে থাকতে।

মমতার অবস্থান মঞ্চে পুলিশ কমিশনারের যোগ দেওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারেননি অনেকেই।

নাম প্রকাশ না করে পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার এভাবে এক নেত্রীর অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দেওয়া তার চাকরির নিয়ম ভাঙার শামিল। কলকাতার পুলিশ কমিশনার আইপিএস পুলিশ কর্মকর্তা। তাই আইপিএস পুলিশ অফিসারদের সংগঠন জিওপিটি (ডিপার্টমেন্ট অব পারসোনাল ট্রেনিং) রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনো রাজনৈতিক দলের অবস্থান ধর্মঘটে বসতে পারেন না।

কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের আড়াল করতে চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তদন্তে বাধা দিচ্ছেন।

২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজীব কুমারকে তার পদ থেকে সরানো হয়েছিল।

ওই সময় মমতা বলেছিলেন, নির্বাচনের পরই আমি আবার তাকে ফিরিয়ে আনব। মমতা সেই কথাও রেখেছেন।

কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলার আজ শুনানি হবে। কলকাতা পুলিশ কমিশনারের বাসভবনে তদন্ত করতে সিবিআই কর্মকর্তাদের ঢোকার চেষ্টার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা মামলাটিরও শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত