সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ অক্টোবর, ২০১৫ ১০:৫১

যুদ্ধাপরাধী সাকা-মুজাহিদের রিভিউ: তিন শতাধিক পৃষ্টার পেপারবুক

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বুধবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন।

তবে মানবতাবিরোধী অপরাধী হাইকোর্টের অবকাশের মধ্যে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে কি-না সেটি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, অবকাশকালীন ছুটির মধ্যে এসব (রিভিউ) আবেদনের শুনানি হবে কি-না তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির। তিনি চাইলে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতিই নেবেন।

অন্যদিকে জামায়াত-বিএনপির এ দুই নেতার আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, চূড়ান্ত রায়ের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরে মুজাহিদ ৩৮ পৃষ্ঠা এবং সাকা চৌধুরী ১০২ পৃষ্ঠার মূল রিভিউ আবেদন করেছেন। উভয় রিভিউয়ের পেপারবুক তিন শতাধিক পৃষ্ঠার।

রাষ্ট্রের এই প্রধান কর্মকর্তা আপিল মামলাগুলোর মতোই রিভিউ আবেদনের শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।

অন্যদিকে দু’জনেরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা।  

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর এ ছুটি শেষ হবে।

সাধারণত মুল রায়ের বড় কোনো বিষয় বাদ পড়ে গেলে কিংবা অসঙ্গতি থাকলে রিভিউয়ে সুবিধা পান আবেদনকারীরা। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মতে, ‘রিভিউ করা মানে চাঁদে হাত দেওয়া’। এমনিতে রিভিউতে রেহাই পাওয়ার নজির তেমন একটা নেই।

গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ এবং ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাদের দু’জনকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।

নিয়ম অনুসারে সে থেকে তারা দু’জন নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করছেন।

যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।

২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত