১০ আগস্ট, ২০১৬ ১০:১১
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যশোরের যুদ্ধাপরাধী ও সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেন জামায়াতে ইসলামি, বিএনপি, এলডিপি, পিডিবি, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছিলেন, এবং জামায়াতের হয়ে ১৯৯১ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন।
মাওলানা সাখাওয়াত নামে পরিচিত এ যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে আরও ৭ জন সহ মোট ৮ জনের রায় ঘোষণা হয় বুধবার, রায়ে সাখাওয়াতকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ৭ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
আট আসামি হলেন- জাতীয় পার্টির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত, মো. বিল্লাল হোসেন বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম হোসাইন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, এম এ আজিজ সরদার, আব্দুল আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম ও মো. আব্দুল খালেক।
একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, আটক, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচ অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
আসামিদের মধ্যো সাখাওয়াত ও বিল্লাল কারাগারে রয়েছেন, বাকি ছয়জনকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে। এ মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি মো. লুৎফর মোড়ল কারাবন্দি থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান।
যুদ্ধাপরাধের পাঁচ অভিযোগে গত বছর ২৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই নয়জনের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর মোট ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সঙ্গে ছিলেন রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে সাখাওয়াতের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরে একাধিক মামলা হলে সেগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাখাওয়াতসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল।
প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
গতবছর ১৮ জুন তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। এরপর ২৬ জুন অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে শুনানি হয়। ১২ জনের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগের উপাদান’ না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আদালত নয়জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয়। এরপর ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি শেষে ২৩ ডিসেম্বর বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
বর্তমানে জাতীয় পার্টিতে থাকা সাখাওয়াত এক সময় ছিলেন জামায়াত নেতা। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। গত সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
পাঁচ অভিযোগ
আপনার মন্তব্য