সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ আগস্ট, ২০১৬ ০২:২৮

মিরন শেখকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার নির্দেশ

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সাখাওয়াত হোসেনের নির্যাতনে আহত হওয়া মিরন শেখকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। মিরন শেখের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নেই, বর্তমান ভিক্ষা করে জীবিকা নিবৃত্তি করছেন।

রাজাকার সাখাওয়াতকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এ নির্দেশ দেন।

যশোরের কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের জোবেদ আলী শেখের ছেলে যুদ্ধাহত মিরন শেখ বর্তমানে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। একাত্তরে এই সাখাওয়াতের হাতেই নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মিরন।

রায়ে মিরন শেখ সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে ট্রাইব্যুনাল এক পর্যায়ে বলেন, ট্রাইব্যুনালের পবিত্র আকাঙ্ক্ষা এই যে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যশোরের কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের জোবেদ আলী শেখে ছেলে মিরন শেখের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিচারক রায়ে বলেন, 'এটা বিস্ময়কর যে, একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই এবং জীবনধারণের জন্য তাকে এখন ভিক্ষা করতে হয়। তিনি তার মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ৪৫ বছর পর সেই রাষ্ট্রে প্রসিকিউশনের হয়ে সাক্ষ্য দিতে এসে তাকে বলতে হয়, তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় যুক্ত না হওয়ার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাইনি।'

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে একদিন সকাল ৬টায় চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্পের ৩০-৪০ জন রাজাকার তার বাড়ি ও গ্রাম আক্রমণ করে। সে সময় তারা মিরন শেখ, স্বাধীনতাপন্থি গ্রামবাসী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঘরে আগুন দেয়। মিরন পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক ও হত্যার জন্য রাজাকার ও তাদের সহযোগীরা পিছু ধাওয়া করে। অভিযুক্ত রাজাকার আবদুল খালেক মোড়ল রাইফেল দিয়ে গুলি করে। তাতে বাঁ হাতের আঙুল থেকে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। এরপর তাকে অপহরণ করে চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্পে আটকে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য পেতে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। রাজাকার কমান্ডার সাখাওয়াত হোসেন তার বাঁ পা ভেঙে দেয়।

এ মামলায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মিরন তার বাঁ হাতের তিনটি আঙুল দেখিয়ে বলেন, ভারতের তাকি হাসপাতালে চিকিৎসার সময় ডাক্তাররা তার দুটি আঙুল কেটে ফেলেন।

রায়ের পর প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল মিরন শেখের কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অত্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করে প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দিয়েছেন, এই ধরনের মুক্তিযোদ্ধা যারা রয়েছেন, বিশেষ করে মিরন শেখের জন্য যা করার তা করতে হবে।

প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে বুধবার যশোরের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাতজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সাখাওয়াত ছাড়া বাকি সাত আসামি হলেন— মো. বিল্লাল হোসেন বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম হোসাইন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, এম এ আজিজ সরদার, আব্দুল আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম ও মো. আব্দুল খালেক।

এদের মধ্যে সাখাওয়াত ও বিল্লাল ছাড়া বাকি ছয়জন পলাতক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত