হামিদুর রহমান, মাধবপুর

০৪ এপ্রিল, ২০২০ ১১:০৩

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও অবহেলিত ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া

৪ এপ্রিল; ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে। নিজের পিস্তল থেকে গুলি ছুড়ে যুদ্ধের সূচনা ঘোষণা করেন জেনারেল এমএজি ওসমানী। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও ঐতিহাসিক এ স্থানটি সংরক্ষণ করা হয়নি। এমনকি চা বাগান কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও নির্মাণ হয়নি মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত হয় মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ৪ এপ্রিল ২য় ও ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোতে এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় মিলিত হন।

সভায় প্রাথমিকভাবে সারা দেশকে ৪টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। যা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত পরিচালনায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন লে. কর্নেল এম.এ.রব, মেজর শফিউল্লাহ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, লে. কর্নেল সালাউদ্দিন রেজা, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নুরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন মতিন প্রমুখ জনপ্রতিনিধি।

৪ এপ্রিলের সভায় কর্নেল ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও লে. কর্নেল এম.এ. রবকে উপ-অধিনায়ক নিয়োগ করা হয়। ৩নং সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন মেজর শফিউল্লাহ। হবিগঞ্জ ৩নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখরিত। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত মুক্তিবাহিনীর সেক্টর হেড কোয়ার্টার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধারণ করে তেলিয়াপাড়ায় নির্মিত হয়েছে বুলেট আকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে ৩৩ জনের নামের তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, সাবেক সেনা, সরকারি কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাম। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম সেনাপ্রধান কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী, সহ-সেনাপ্রধান লে. কর্নেল আব্দুর রব এমএনএ, মেজর কে.এম সফিউল্লাহ (সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মেজর খালেদ মোশাররফ (কুমিল্লা-নোয়াখালি), মেজর জিয়াউর রহমান (চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম) ও মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (কুষ্টিয়া-যশোহর পশ্চিম রণাঙ্গন)।

স্বাধীনতার পর সেখানে বুলেট আকৃতির দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধও নির্মাণ করা হয়। এমন ঐতিহাসিক স্থানটি স্বাধীনতার এত বছর পরও রয়ে গেছে চরম অবহেলিত। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার সাধারণ মানুষদের দাবি, দ্রুত এখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হোক।

কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) কাজী কবির উদ্দিন জানান, ২০১১ সালের ৭ মে মুক্তিযোদ্ধাদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেলাল মুর্শেদ খান বীরবিক্রম এখানে কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা দেন। তা নির্মাণে ১০ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয়ও ধরা হয়েছিল। এজন্য প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করলে বাগানের পরিবেশ নষ্ট হবে এনটিসির এমন দাবির অজুহাতে তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।

তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক এমদাদুল হক জানান, বাগান এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স তৈরিতে বাগান কর্তৃপক্ষের আপত্তি নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত