সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ জুন, ২০২০ ১৮:৫৩

পিপিই পরা না জানায় চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, পিপিই কীভাবে পরতে হবে এবং খুলতে হবে এই বিষয়টি জানা না থাকার কারণেই চিকিৎসকরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ফলে আক্রান্তের হার কমে গেছে।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদের বৈঠকে এসময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সঙ্কট নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হলো। ভেন্টিলেটর নিয়ে বিরাট হৈ চৈ। কিন্তু দেখা গেছে ভেন্টিলেটরের কোন প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেটরে যারা গেছেন তাদের প্রায় সকলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের চারশ ভেন্টিলেটর আছে। এর মধ্যে ৫০টিও ব্যবহার হয়নি। সাড়ে তিনশত ভেন্টিলেটর খালি পড়ে আছে। কারণ তখন মানুষ এটা জানতো না।

করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা ওষুধ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রী এ সময় দাবি করেন। তিনি বলেন, করোনার কী চিকিৎসা লাগবে ডব্লিউএইচও তা বারে বারে চেঞ্জ করেছে। আমরাও সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে। কেউ কিন্তু আগে বলেনি পিপিই লাগবে। যখন বলা হলো তখন সারা বিশ্ব লকডাউন। এই লকডাউনের কারণে আমরা পিপিই পাচ্ছিলাম না। যন্ত্রপাতি পাচ্ছিলাম না। পরে আস্তে আস্তে ব্যবস্থা করছি। এখন আর সেই অভিযোগ নেই। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। এখন হাইফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। আমরা এক হাজার অক্সিজেনের অর্ডার দিয়েছি। প্রায় ১০ হাজার নতুন সিলিন্ডার বানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন



স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সংসদ সদস্যরা সংসদে আমাদের কেবল দোষারোপ করে গেছেন। আমরা কী কাজ করেছি তা আসেনি তাদের বক্তব্যে। কভিড আসার শুরু থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চীনে কোভিড দেখা দেয়ার পরপরই আমরা পোর্টগুলোতে স্ক্রিনিংসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রত্যেক জেলা উপজেলার হাসপাতালে কোভিডের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছি। আমরা জাতীয় পর্যায়ে কমিটি তৈরি করেছি। ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এই হার ভারতে ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ। এটা এমনিতেই হয়নি। সকলে কাজ করেছে বলেই এটা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ক্রমে আমরা ইতোমধ্যে কোভিডের জন্যই শুধু দুই হাজার নতুন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছেন। সেটা ১৫ দিনের মধ্যেই নিয়োগ দিয়েছি। হটলাইনে এক থেকে দুই লাখ মানুষ ফোন করে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিচ্ছেন।

মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের ৮০ শতাংশ রোগীর কোন লক্ষণ দেখা দেয় না। ১৫ শতাংশের মাইল লক্ষণ দেখা দেয়। আর ৫ শতাংশের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। আমরা ৮০ শতাংশ রোগীকে বাসায় রেখে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।টেলিমেডিসিন চালু করেছি।

দেশের টেস্টিং ক্যাপাসিটি বাড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব ছিলো। দেড় মাসে আমরা এখন ৬৮টি ল্যাব করেছি। দিনে মাত্র দেড়শটা টেস্টের ব্যবস্থা ছিলো সেটা এখন আঠার হাজারে উন্নীত হয়েছে। এটা এমনিতেই হয়নি। আমরা জানি আমাদের আরো টেস্ট দরকার। আরো করলে ভালো হয়। কিন্তু কোটি কোটি লোককে টেস্ট করতে পারবেন না। এটা আমাদের মানতে হবে।

সরকারের উদ্যোগের ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হয়েছে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়নি। আমরা তাদের নিয়ে এসেছি। এখন তারা কভিড চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে, এটা ঠিক তারা বিলটা একটু বেশি করছে। কভিড চিকিৎসায় ব্যয় একটু বেশি। আমরা বলেছি আমরা চার্জ ঠিক করে দেবো। এই সময়ে আপনারা লাভের চিন্তা করবেন না। মানুষকে সেবা দিন।

রোগী সেবা পাচ্ছে না এই অভিযোগ আর কোথাও নেই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মোট বেডের ৬০ শতাংশে এখন রোগী আছে। ৪০ শতাংশ বেড এখনো খালি পড়ে রয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার বেড করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত আছে। সেখানে রোগী আছে চার হাজার।

বিজ্ঞাপন



তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও করোনার চিকিৎসা ঠিক মতো নেই। টিকাও আবিষ্কার হয়নি। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের মৃত্যুর হার কম। তবে জীবন জীবিকার বিষয় আছে। সেই কারণে আমাদের সংক্রমনের হার কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মৃত্যুর হার তুলনামুলকভাবে কম। মানুষ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে এই সংক্রমনের হারও কমবে বলে আশা করি।

সমন্বয়হীনতার অভিযোগ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাষ্য
করোনা মোকাবেলায় সমন্বয়হীনতার সংসদ সদস্যদের অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোন সমন্বয়হীনতা নেই, ৫ মাস কিন্তু আমরাই মাঠে আছি। ২৫ দিনে বসুন্ধরায় দুই হাজার বেডের হাসপাতাল বানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে কভিড চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।’

ঢাকা মেডিকেলের দুর্নীতির অভিযোগ ‘টোল্যালি রং’
ঢাকা মেডিকেলের করোনা সম্পর্কিত চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার বিষয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের থাকা-খাওয়ার বিষয় নিয়ে যে কথা হয়েছে আমি খোঁজ নিয়েছি। কাল রাতে আমি এটা দেখেছি। ৫০টি হোটেল ভাড়া হয়েছে। সেখানে তিন হাজার ৭’শ মানুষ একমাস থেকেছে। প্রত্যেকটি রুমের ভাড়া ১১০০ টাকা। খাওয়ার খরচ যেটা বলা হয়েছে তা ‘টোটালি রং’। সেখানে দিনের তিনটি মিলের জন্য খরচ ৫০০ টাকা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত