সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুলাই, ২০২০ ০২:১৪

কে এই ডা. সাবরিনা?

দেশজুড়েই এখন আলোচিত-সমালোচিত নাম ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। জেকেজির প্রতারণা কাণ্ডে উঠে এসেছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের এই চিকিৎসকের নাম। তিনি টকশো কিংবা স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনার নিয়মিত মুখ। দিতেন সুস্থ থাকার নানা ফর্মুলা। তিনি চিকিৎসক মহলে বেশ প্রভাবশালীও বটে।

জোবেদা খাতুন স্বাস্থ্যসেবা (জেকেজি) প্রজেক্টের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী। প্রধান নির্বাহীর চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনা। যদিও সাবরিনার দাবি, আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে তার এখন কোনো সম্পর্ক নেই। তবে হৃদরোগ হাসপাতালে তার কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায় স্বামীর নামযুক্ত নেমপ্লেট ডা. সাবরিনা আরিফ।

ডা. সাবরিনা আরিফের প্রভাব

বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসাবিষয়ক মহলে ডা. সাবরিনা অনেক প্রভাব আছে। চিকিৎসকদের একটি প্রভাবশালী সংগঠনের এক প্রভাবশালী নেতার জুনিয়র বান্ধবী তিনি। সেই সুবাধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়েও ছিল তার প্রভাবের বিস্তৃত ডালপালা। আর এতসব কিছুকে কাজে লাগিয়ে এই করোনা মহামারির সময়ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন তিনি।

সাবরিনার ক্ষমতার ব্যবহার

বিজ্ঞাপন



সাবরীনার ক্ষমতাবলে জোবেদা খাতুন স্বাস্থ্যসেবা (জেকেজি) প্রজেক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাগিয়ে নেয় করোনার স্যাম্পল কালেকশনের সুযোগ। প্রথমে রাজধানীর তিতুমীর কলেজ মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি নেন ডা. সাবরিনা। পরে প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকা এবং অনেক জেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করছিল তার এই প্রতিষ্ঠান। জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে জেকেজি করোনার নমুনা সংগ্রহ করলেও শুরু করে প্রতারণা। করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করে ইচ্ছেমতো রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ উঠে সাবরীনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জেকেজির কয়েকজন কর্মী গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ও সাংবাদিকদের বলেন, তারা রোগীদের জ্বর থাকলে তাদের করোনা পজিটিভ আর জ্বর না থাকলে নেগেটিভ রিপোর্ট দিত।

সাবরিনার প্রতিষ্ঠানে পুলিশের অভিযান

এরই পরিপেক্ষিতে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজিতে অভিযান পরিচালনা করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। অভিযানের দিন প্রতারণার মূল হোতা ও জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন ডা. সাবরিনা ।

করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদান

করোনার এই মহামারির সময়ে যখন অনেক মানুষ মানবিক হয়ে উঠেছেন ঠিক তখন জীবন-মৃত্যু নিয়ে খেলা করেছেন সাবরীনার প্রতিষ্ঠান জেকেজি। নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই দিয়েছে ভুয়া রিপোর্ট। বাংলাদেশ ছাড়া করোনায় নুয়ে পড়া বিশ্বে এসব ঘটনাকে ভয়ংকর গল্প বলে খবর প্রকাশ করেছে। এসব গল্পের মতোই জীবন ডা. সাবরিনা ও আরিফ চৌধুরীর। তিনি আরিফ চৌধুরীর চতুর্থ স্ত্রী। আরিফের দুই স্ত্রী থাকেন রাশিয়া ও লন্ডনে। আরেক স্ত্রীর সঙ্গে আরিফের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তবে ছাড়াছাড়ির পরও সাবেক ওই স্ত্রী উচ্চমহলে আরিফের জন্য দেনদরবার করে যাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদের পর সাবরিনাকে গ্রেপ্তার

বিজ্ঞাপন



করোনা রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণার ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার দুপুরে তাঁকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগীয় উপকমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়াসহ নানা বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানান হারুন অর রশিদ।

তেজগাঁও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেকেজি থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটি ল্যাপটপের মাধ্যমে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের প্রদান করে। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণও পেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। যাদের নমুনা সংগ্রহ করতেন তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রতি রিপোর্টের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নিতেন ১০০ ডলার। তেজগাঁও থানা পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত