সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ জানুয়ারি, ২০২১ ২২:৪৯

কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকলে জানান: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাদের জন্য এত ত্যাগ করেছেন, তাদের সবাইকে তার জন্ম শতবার্ষিকীতে ঘর করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভূমিহীন, গৃহহীন, নিঃস্ব মানুষদের মধ্যে এখনও কারা তালিকায় আসেননি, সেটি জানাতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ৪৯ বছর পূর্তিতে রোববার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এই আলোচনায় শেখ হাসিনা যুক্ত হন তার বাসভবন গণভবন থেকে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর পর বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করা হয়। তার আগেই তিনি ঘোষণা করে যান বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ২৫ দিন পর তিনি দেশে ফেরেন। সেই থেকে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে জাতির জন্য আমাদের মহান নেতা জীবন দিয়েছেন, সে জাতির জীবন সুন্দর করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যে দেশের জন্য জাতির পিতা এত ত্যাগ করেছেন, তার জন্মশতবার্ষিকীতে সেই দেশের প্রত্যেক মানুষকে ঘর করে দেবো।’

গৃহহীনদের ঘর করে দিতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প আছে সরকারের। এর মধ্যে মুজিব বর্ষে নয় লাখ মানুষকে ঘর করে দেয়ার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলোর নির্মাণ কাজও চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে বলব, আপনাদের বাড়ির পাশে যদি কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন-নিঃস্ব মানুষ থাকে আমাদের জানাবেন। আমরা সরকারের টাকায় তাদের ঘর করে দেবো।

‘গৃহহীনদের তালিকা করে সবাইকে আমরা ঘর করে দিতে চাই। এদেশের শতভাগ ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চাই।’

‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সরকার জনগণের সেবক। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ঘটা করে করতে না পারলেও মানুষের সেবা করেই তা উদযাপন করব।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এদেশের মানুষ যা কিছু পেয়েছে তা একমাত্র আওয়ামী লীগই দিয়েছে। এর কারণ, আমরা জাতির পিতার আদর্শে পথ চলি।’

‘মুক্তি পেয়ে জনগণের কাছেই আগে যান বঙ্গবন্ধু’

পাকিস্তানের কারাগারে ৯ মাস কাটানোর পর পরিবারের কাছে না এসে আগে মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আলোচনায় এভাবেই জনগণের প্রতি পিতার ভালবাসার কথা তুলে ধরেন তার কন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার আব্বা কিন্তু আমাদের কাছে আসেন নাই। তিনি কিন্তু পরিবারের কাছে না... তার জনগণকে যে তিনি কত ভালোবাসতেন, এটাই হলো সবচেয়ে বড় কথা। যে বাংলার মানুষকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সেই বাংলার মানুষের কাছেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ নয়টা মাস যে কারাগারে ছিলেন সেখানে তার উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন। তিনি আপনারা লক্ষ্য করবেন, শুকিয়ে কী রকম দড়ি দড়ি হয়ে যান। ৪০ পাউন্ড ওজন তার কমে যায়। তারপর সেই বন্দিখানা থেকে তিনি প্রথমে চলে যান লন্ডন। সেখানে প্রেস কনফারেন্স করেন, প্রধানমন্ত্রী হিথের সঙ্গে দেখা করেন। আমাদের প্রবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

‘সেখান থেকে তিনি দিল্লি আসেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এবং ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেও তিনি জনগণের সামনে বক্তব্য দেন। তারপর তিনি ঢাকায় আসেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে চলে যান।’

কতোটা নিবেদিত হলে মানুষ এতো ত্যাগ করতে পারে

দেশে ফিরে ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিষয়টিও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। বলেন, ‘যে ভাষণটা তিনি দিয়েছেন, সেখানে রাষ্ট্রপরিচালনা করার সব নির্দেশনা সেই ভাষণে আছে। এবং সেখানে কিন্তু তার হাতে লেখা কাগজ-টাগজ কিছুই নেই। তিনি যা বলেছেন নিজের মন থেকে বলেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ যারা আমাদের সহযোগিতা করেছে তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই দীর্ঘ নয় মাস যে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত অত্যাচারিত হয়েছে সেকথাগুলোও তিনি তুলে ধরেছেন। এবং দেশটাকে কীভাবে পরিচালিত করা হবে তার দিক নির্দেশনাও তিনি দিয়েছেন। এর প্রতিফলন আমরা দেখি আমাদের যে সংবিধান তিনি দিয়েছিলেন সে সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।

‘একজন মানুষ একটা জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে পরে, মানুষকে কতটা ভালোবাসতে পারলে এইভাবে আত্মত্যাগ করতে পারে আর এভাবে মানুষের কথা বলতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর সব ভাষণ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীর নতুন করে শোনার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তাহলেই রাজনীতি করার একটি প্রেরণা এবং দিক নির্দেশনা সবাই পাবে।’

জাতীয় ঐক্য চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালে কোন প্রেক্ষাপটে বাকশাল গঠন তা তুলে ধরেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর মাত্র সময়। এর মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পাঁচ বছরের একটি কর্মসূচি তিনি নিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে ঐক্য গড়ে তুলে সকলকে নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করবার জন্য।

‘কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত বেশি বুঝে ফেলে এবং তাদের অপপ্রচার-অপকর্ম সে সময় নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা... যা কিছু করতে চান সেখানে বাঁধা দেয়া।’

বাকশাল কায়েম করতে পারলে দেশ আরও আগে উন্নত হতো বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে তৈরি করা যে শাসন ব্যবস্থা, তার আমূল পরিবর্তন করে গণমুখি ব্যবস্থা করার যে পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন, সেটা যদি করে যেতে পারতেন তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত সোনারবাংলা হিসেবে গড়ে উঠত, এতে কোনো সন্দেহ নাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত