সিলেটটুডে ডেস্কঃ

১০ নভেম্বর, ২০১৫ ১৮:১৬

ক্ষমা চাইতে টিআইবিকে তিন দিন সময়, অন্যথায় ব্যবস্থা: সুরঞ্জিত

সংসদ, সংবিধান ও রাষ্ট্র নিয়ে ‘অবমাননাকর’ বক্তব্য করায় ক্ষমা না চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ  (টিআইবি)’র  বিরুদ্ধে সরকার আইনত ব্যবস্থা নিতে পারে  বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

সংসদ, সংবিধান ও রাষ্ট্র নিয়ে ‘অবমাননাকর’ বক্তব্য দিলে  বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান করার কথা বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।


মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে  ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উদ্দেশ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিটি সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও তালুকদার মো. ইউনূস।

বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার যদি বিবেচনা করে যে, কোনো এনজিও সংসদ, রাষ্ট্র, বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে অশালীন ও অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হবে। কমিটিও এটা বিবেচনা করছে।”

সুরঞ্জিত বলেন, আমি সংসদেও বলেছি, আজও বলছি-তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে টিআইবি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে সম্মত কমিটি।

এ সময় টিআইবির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা সরকারের প্যারালাল হয়েছে, গভর্মেন্ট প্যারালাল হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৫ কমিটিতে রয়েছে, বিলও চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে, এখন পাস হবে। বিলে সংশোধনী আসছে, যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারের বিরুদ্ধে সাংঘর্ষিক বা অশালীন বক্তব্য দেয়, তব তাদের বিরুদ্ধে সরকার যে কোন সময় যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে।

টিআইবি সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘ইফতেখারকে ক্ষমা চাইতে হবে, তা না হলে সরকার চাইলে তাদের (টিআইবি) বাদ দিতে পারবে। এ সময় তিনি ড. ইফতেখারুজ্জামানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাদের রাজনীতি করার খায়েশ থাকলে রাজনৈতিক দলে গিয়ে নাম লেখাক।’  

বিদ্যমান আইনেই টিআইবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে সুরঞ্জিত বলেন,‘বিদ্যমান আইনেই এর সুযোগ রয়েছে, তবে আমরা প্রয়োগ করি না। আমরা সময় দিয়েছি, এই সময়ের মধ্যে বক্তব্য তুলতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।’

ড.ইফতেখা‍রের উদ্দেশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘ইচ্ছা হলে সরকারকে বলবেন,সংবিধানকে বলবেন, জুডিশিয়ারিকে বলবেন। এই অধিকার রাজনৈতিক দলকে দেওয়া হয়েছে। টিআইবি সামাজিক আইন ও সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করেছে।’
 
তিনি আরও বলেন,‘অন্য এনজিওদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু টিআইবি সংসদ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য কেন করলো তা জানতে হবে। টিআইবি যা বলেছে তা অগ্রহণযোগ্য, একদমই অগ্রহণযোগ্য। সংসদ, সংবিধান ও রাষ্ট্র নিয়ে মজা করা বিশ্বের কোনো দেশেই হয় না। আমরা এনজিওবান্ধব, তার মানে এই না সরকার-সংবিধান-রাষ্ট্র নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলবে। এ অধিকার তাদের কেউ দেয়নি। এ অধিকার রাজনৈতিক দলকে দেওয়া হয়েছে’ যোগ করেন সুরঞ্জিত।

নির্বাচন প্রসঙ্গে টিআইবির মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বির্তক থাকতে পারে। বিএনপি নির্বাচন করতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে সংবিধান, রাষ্ট্র নিয়ে কেউ তামাশা করবে এই অধিকার কেউ কাউকে দেয়নি। নির্বাচন রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক রাজনৈতিক দল টু রাজনৈতিক দল। এখানে তারা কে।

ইফতেখারুজ্জামানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তুমি কে হে, তুমি কে? তুমি বিদেশ থেকে টাকা এনে চলো।’

এনজিওদের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এনজিওদের দেশ সেবা ছাড়া এখানে কোন কাজ নাই। তারা যদি দেশ সেবা করতে চায়, নিবন্ধিত হতে হবে সরকারের অধীনে। সরকার যদি মনে করে তারা থাকবে তাহলে থাকবে, আর যদি সরকার অনুমতি না দেয় তাহলে কিছু করার নাই। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা  নিয়ে কেউ কথা বললে তার বিরুদ্ধে সরকার যে কোন সময় যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে।

টিআইবির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা সংসদ নিয়ে গবেষণা করবে ভাল কথা,  কিন্তু এভাবে অশালীন কথা বলার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? দেশের নাগরিক হিসেবে কথা বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কাউকে অপমান করার অধিকার তাদের কেউ দেয়নি।’

এ সময় অন্যান্য এনজিওদের প্রতি সুরঞ্জিত সেন বলেন, ‘তাই অন্যান্য এনজিওদের  দায়িত্ব নিতে হবে ইফতেখার সাহেব তাদের স্পোকসম্যান কী না?  তারা দায় নিলে এক রকম, না নিলে আর এক রকম ব্যবস্থা।

সুরঞ্জিত সেন এ সময় সংবিধানের ব্যাখ্যা উল্লেখ করে বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। সংবিধানের ৭ (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে কেউ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে কোন কথা বলে তাহলে সেটা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ। সংবিধানে ৭৮ অনুচ্ছেদে এটা প্রটেক্ট করে যে এ নিয়ে কোর্টে কেউ কোন মামলা করতে পারবে না।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত