সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০৩:০২

পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি

পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছেন একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা।

তারা বলেছেন, একাত্তরের বর্বরতা নিয়ে পাকিস্তান যেসব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে, তার জবাব এখন তাদের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা। তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরুর প্রথম প্রহরে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘অপরাজেয় বাংলা’র পাদদেশে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনেরা এ কথা বলেন। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১ তারিখের প্রথম প্রহরে ‘ডিসেম্বর: বিজয়গাঁথা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ (বীরউত্তম), সিনিয়র সহ-সভাপতি এম হারুনুর রশিদ (বীর প্রতীক), ঢাবি উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ কে এম আলী শিকদার, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সও বক্তব্য রাখেন।

কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “দেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে পাকিস্তান যে ধরনের উদ্বেগ, বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়েছে, এরপর দেশটির সঙ্গে কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখাই উচিত নয়।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান মুক্তিযুদ্ধের এ সেক্টর কমান্ডার।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এ দেশ কখনও পরাজিত হওয়ার নয়। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। দেশবিরোধীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।”

একাত্তরের ডিসেম্বর মাসের কথা স্মরণ করে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থা খুব করুণ ও শোচনীয় হয়ে পড়ে। চারদিকে মুক্তিসেনারা পাকিস্তানিদের পরাজিত করতে থাকে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের বিবৃতি, প্রতিবাদ একটি স্বাধীন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ের উপর হস্তক্ষেপ। এরপর পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার আর কোনো সুযোগ নেই।”

একাত্তরে গণহত্যা এবং এখন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য জাতিসংঘে পাকিস্তানের সদস্য পদ বাতিলের দাবি তোলার আহ্বানও সরকারকে জানান তিনি।

“পাকিস্তানের অবস্থান সার্কের চেতনারও পরিপন্থি। পাকিস্তানকে সার্ক থেকেও বহিষ্কার করতে হবে।”

ডিসেম্বর মাসকে একই সঙ্গে ‘আনন্দ ও বেদনার মাস’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ মাসে আমরা যেমন বিজয় অর্জন করেছি। ঠিক তেমনি করে বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হারিয়েছি।”

এর আগে রাত সাড়ে ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে একাত্তরের হত্যাযজ্ঞ ও কুকর্মের কথা অস্বীকার করে পাকিস্তান সরকার। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যায় পাকিস্তান জড়িত ছিল বলে বাংলাদেশ সরকার যে কথা বলছে, তা ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অমূলক’।

বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতাদের হাতে এ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আলোকবর্তিকা তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ফোরামের নেতারাও শিক্ষার্থীদের হাতে গৌরবের জাতীয় পতাকা তুলে দেন।

এরপর মশাল প্রজ্জ্বলন করে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে তারা বিজয়ের মাসকে বরণ করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত