সিলেটটুডে ডেস্ক:

১৩ আগস্ট, ২০২২ ২২:১৮

ডাকাতি রোধে সব মহাসড়কে র‌্যাবের টহল জোরদার

ফাইল ছবি

দেশের সব মহাসড়কে টহল জোরদার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিন (র‍্যাব)। সেইসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। মহাসড়কে ডাকাতিতে জড়িত একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ডাকাত সর্দার মুসা আলী, তার সহযোগী নাঈম মিয়া, মো. শামিম, রনি, আবু সুফিয়ান ও মো. মামুন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে র‍্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১১ এর একটি দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর থানা এলাকায় এ অভিযান চালায়।

অভিযানে জব্দ করা হয় দুটি চাপাতি, একটি চায়নিজ কুড়াল, একটি ছোরা ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি বাস। এ সময় ডাকাতের খপ্পরে পড়া দুই ভুক্তভোগী ও তাদের পণ্যবাহী পিকআপও উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ডাকাতি করে এর আগে যারা আইনের আওতায় এসেছে এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের বর্তমান অবস্থান ও পেশাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ রাখছে র‍্যাব। ব্যাটালিয়ন পর্যায়েও ডাকাতি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান। সম্প্রতি কিছু ডাকাতির খবর গণমাধ্যমে এসেছে। মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধ এখন জনদাবিতে পরিণত হয়েছে। এ কারণে সীমিত জনবল নিয়েও সারাদেশে টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি র‍্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখাও এ নিয়ে কাজ করছে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতদের যদি পুনর্বাসন করা যায়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ কমে যাবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার, সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ৪০৫ ডাকাত র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা গোলাকান্দাইল এশিয়ান হাইওয়েতে সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে একটি ডিমবোঝাই পিকআপ থামায় র‍্যাব-১১ এর টহল দল। তখন পিকআপ থেকে দুইজন পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তল্লাশি করে একটি চাপাতি ও একটি চায়নিজ কুড়াল পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ডাকাতির উদ্দেশে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের একটি বাস নিয়ে ভুলতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়েতে ব্যারিকেড দিয়ে ডিমবাহী পিকআপটির গতিরোধ করেন। এরপর পিকআপের চালক ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পিকআপটি নিয়ন্ত্রণে নেন। চালক-হেলপারকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে নিজেদের বাসে উঠিয়ে নেন। পরে ডাকাত দলের সর্দার মুসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। দলের বাকি সদস্যরা পিকআপের চালক ও হেলপারকে বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।

তাদের তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি জব্দ করা হয়। তখন পালানোর চেষ্টার সময় চার ডাকাতকে আটক করা হয়। পালিয়ে যায় আরও চার-পাঁচজন। বাসের ভেতর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পিকআপ চালক ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, ১০-১২ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, গাড়িচালক, হেলপার, আবার কেউ রাজমিস্ত্রি বা কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতিতে অংশ নেন।

গ্রেপ্তার মুসা র‍্যাবকে জানান, তিনি ১০-১২ বছর ধরে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতি করেছে তার দল। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগেও তিনি ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার সহযোগী শামিম ডাকাতিতে ব্যবহৃত বাসটি চালান। ২০০৬ সালে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে তিনি সাত বছর কারাভোগ করেন। গ্রেপ্তার রনি ওই বাসটির হেলপার। নাঈম পেশায় গাড়িচালক। আর মামুন স্থানীয় একটি সেলাই কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত