বর্তমান সংসদ সদস্যকে ‘রাতের ভোটের এমপি’ বলায় সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদারকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, ‘বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে শো-কজ করা হয়। তিনি শো-কজের জবাবও দিয়েছেন। এসব কাগজপত্র আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি।

‘কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাকে যেন বহিষ্কার করা না হয়। কিন্তু আমরা জটিলতা এড়ানোর জন্য জেলা কমিটির মিটিংয়ে তাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছি। কেন্দ্র থেকে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন না করার নির্দেশ দিলে আমরা তাকে স্বপদে ফিরিয়ে নেব। তার আগ পর্যন্ত ১ নম্বর সহ-সভাপতি যিনি আছেন তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর শুনছি। তবে আমি এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো চিঠি হাতে পাইনি।’

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘উপজেলা সভাপতির যে বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সেটি এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় যা নিয়ে বাইরে কোথাও আমরা মিটিং পর্যন্ত করতে পারছিলাম না। যে কারণে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এরপর জেলা আওয়ামী লীগ তাকে শো-কজ করেছে।

‘তিনি শো-কজের সন্তোষজনক জবাব দেননি। এরপর ২৩ মে (মঙ্গলবার) বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের একটি বর্ধিত সভা হয়েছে সব উপজেলার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, মাহবুবুর রহমানকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হোক।’

প্রসঙ্গত, উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ছাত্রলীগ কর্মী রুমান কলাপাড়া আসনের বর্তমান এমপি অধ্যক্ষ মো. মহিববুর রহমানের একটি ছবি ফেসবুকে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ লিখে পোস্ট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মার্চ রুমানকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন মাহবুবুবর রহমান।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুমানকে বলেন, ‘৭০ বছরের মধ্যে ৬০ বছর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারি আমি আর আমার বাপে। তুই বেটা কি কছ, ছেমড়া। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ করতে হলে আমার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেতে হবে। তোর রাজনীতি করাডা আমি দেহাইতেছি।’

ওই মোবাইল কথোপকথনের ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘তোর এমপি মানবতার ফেরিওয়ালা কী করছে, আমারে বুঝাইয়া দে। কয় কিলোমিটার রাস্তা করছে? রাতে ভোট হইয়া গেছে, হেই এমপি তোর। আওয়ামী লীগ আমি আর আমার বাপে। অন্যরা রাজাকার।’

সাবেক প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন।