নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ এপ্রিল, ২০১৬ ০২:০০

আজ বাঙালির উৎসবের দিন

নমো, নমো, হে বৈরাগী/তপোবহ্নির শিখা জ্বালো জ্বালো,/ নির্বাণহীন নির্মল আলো/অন্তরে থাক জাগি/নমো নমো হে বৈরাগী...

বৈশাখকে এভাবেই ধরাতলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চৈত্রের রুদ্র দিনের পরিসমাপ্তি শেষে আজ বাংলার ঘরে ঘরে এসেছে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির জীবনের সবচেয়ে আনন্দের এবং মহিমান্বিত ক্ষণ। বাংলা ১৪২৩-এর প্রথম দিন আজ।

হাজারও বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজ বাঙালি হারিয়ে যাবে বাঁধাভাঙা উল্লাসে। উৎসব আর উচ্ছ্বাসে ভরে যাবে বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো সব জরা মুছে ফেলে কণ্ঠে কণ্ঠে বেজে উঠেছে নতুন দিনের গান। ১৪২২-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হয়েছে নতুন পথচলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে আজ এক সঙ্গে সবাই গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।

গ্রাম থেকে শহর, নগর থেকে বন্দর, আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ থেকে অফুরান প্রকৃতি সবখানেই আজ দোল দেবে বৈশাখী উন্মাদনা। মুড়ি-মুড়কি, মণ্ডা-মিঠাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে নাচে-গানে, ঢাকেঢোলে, শোভাযাত্রায় পুরো জাতি বরণ করবে নতুন বছরকে। খোলা হবে বছরের নুতন হিসাব নিয়ে হালখাতা। চলবে মিষ্টিমুখের আসর। তারও আগে সকালটা কারও কারও শুরু হয়েছে নগর সংস্কৃতির দান পান্তা-ইলিশ উৎসবে মেতে উঠে।

বুধবার বসন্তের শেষ দিনে চৈত্রসংক্রান্তির নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতি বিদায় জানিয়েছে বাংলা ১৪২২-কে।

আজ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ।

নির্বিঘ্নে উৎসব পালনে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এবারই প্রথম পহেলা বৈশাখ বরণ উপলক্ষে সরকার ঘোষণা করা হয়েছে বিকাল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে উন্মুক্ত স্থানে বৈশাখী সব আয়োজন। সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মুখোশ আর বিকট আওয়াজের বাঁশি ভুভুজেলা। তবে সন্ধ্যার পর আবদ্ধ স্থানে অনুষ্ঠান করা যাবে। ভুভুজেলা বন্ধের বিষয়টি সর্বমহলে সমাদৃত হলেও বিকাল ৫টার মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে আয়োজন সমাপ্তির ঘোষণায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

দিনটিতে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সহ রাজনৈতিক দলের প্রধানরা।

কবি নির্মলেন্দু গুণ কবিতায় তাইতো বলেছেন ‘এসো বলতেই শতাব্দী প্রাচীন বটবৃক্ষের/নবীন পল্লবশোভা নৃত্যভঙ্গিমায় জেগে উঠলো/ বৈশাখের প্রথম প্রহরে। বৃত্তায়ন পূর্ণ করে/যেন সূর্যের মাধ্যমে আকাশ পাঠালো তার/স্বর্গীয় শুভেচ্ছাবার্তা, আমাদের মর্তভূমিতে।/বীণার ঝংকারে দুলে উঠলো রমনা পার্ক/ রবীন্দ্রসঙ্গীতে, নজরুলে, অতুলে, লালনে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত