সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০৯:০৪

আ’লীগ নেতার স্কুলে শিবিরের জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

রাজশাহীতে এক আওয়ামী লীগ নেতার স্কুলে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। স্কুল ছুটির পর সন্ধ্যার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মী ও জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার নেতাকর্মীদের এ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার খড়খড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের এ প্রশিক্ষণ চলছে বলে উঠে এসেছে একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। স্কুলটির সভাপতি পারিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবীবুর রহমান নবী।

ওই প্রতিবেদনের পর ঘটনাটি তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধিদফতর থেকে জরুরি ইমেইল এসেছে। এতে অভিযোগটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।ছুটি শেষে (আজ রোববার) অফিস খুললে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, ৩ এপ্রিল এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেয় একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে চিঠি দেয়।

এরপরই বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (রাজশাহী অঞ্চল) উপ-পরিচালক ও রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের বরাবর ১৩ এপ্রিল পাঠানো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক উইং) মো. সবুজ আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, রাজশাহী মহানগরীর খড়খড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিবির কর্মীরা ছাত্রীদের কারাতেসহ বিভিন্ন জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে সাংগঠনিক কার্যক্রমও চালাচ্ছে শিবির।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের সভাপতি ও পারিলা ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবীবুর রহমান নবী বলেন, স্কুল থেকে দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে নারিকেল বাড়িয়ায় কৃষি কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে) শিবিরের আন্ডারগ্রাউন্ড প্রশিক্ষণের কথা শুনেছি। কিন্তু আমার স্কুলে এ ধরনের জঙ্গি প্রশিক্ষণের কথা শুনিনি।এটি আমার জানা নেই।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, এখানে গত ৫-৬ বছর ধরে কারাতেসহ বিভিন্ন ধরনের মারামারির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের বোঝানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। পথেঘাটে অনেক সময় তাদের লাঞ্ছিতও হতে হয়। এ কারণে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো হচ্ছে।

সূত্র মতে, ওই স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষকই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারাই মূলত কৌশলে ছাত্রীদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ প্রশিক্ষণ চললেও কেউ বাধা দেয়নি।

অপর একটি সূত্র বলছে, সন্ধ্যার পরে ওই স্কুলে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা খেলার নামে জড়ো হন। নিরাপত্তা প্রহরীকে ম্যানেজ করে স্কুল আঙিনায় তাদের প্রশিক্ষণ চলে।চারপাশে উঁচু সীমানা প্রাচীর থাকায় বাইরে থেকে ভেতরে কী হচ্ছে তা চোখে পড়ে না। মূলত এই সুযোগটিই নিয়েছে তারা।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন খড়খড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, স্কুল চলাকালীন এ ধরনের কোনো প্রশিক্ষণ হয় না। স্কুল ছুটির পর বিকালে সীমানা প্রাচীর টপকে কিছু ছেলে ক্রিকেট খেলে বলে আমি শুনেছি। কিন্তু আমাকে দেখলেই তারা পালিয়ে যায়। এজন্য স্কুলের নিরাপত্তা প্রহরীকেও সতর্ক করা হয়েছে।

পবা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকতাদির আহমদ বলেন, কারাতে প্রশিক্ষণের অভিযোগ শুনে আমি কয়েক দিন আগে স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা পাইনি। এ বিষয়ে পুলিশের কাছেও কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার সুশান্ত চন্দ্র রায়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সূত্র: যুগান্তর। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত