সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:২৪

ঝুঁকিতে শাহবাজপুর ব্রিজ, ঢাকা-সিলেট সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা

হুমকির মুখে ঢাকা-সিলেট সড়ক যোগাযোগ। যেকোনও সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় তিতাস নদীর ওপর নির্মিত শাহবাজপুর ব্রিজটি যানবাহন চলাচলে প্রায় অনুপযোগী পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্রিজের অন্তত ৮ থেকে ১০টি স্থানে রেলিং ভেঙে গেছে। ফাটল ধরেছে একাধিক স্থানে।

তবে, জেলার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) কর্মকর্তারা বলছেন,  আগামী নভেম্বর নাগাদ নতুন ব্রিজের কাজ শুরু হবে। সতর্কতার সঙ্গ গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না। বিপরীতে স্থানীয় প্রতিনিধিদের আশঙ্কা, বড় যানবাহন উঠলে ব্রিজটি যেভাবে নড়ে, তাতে যেকোনও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস ও ট্রাকের মতো ভারী যানবাহন সেতুতে উঠলেই কাঁপতে থাকে ১৯৬৬ সালে স্থাপিত শাহবাজপুর ব্রিজটি। ব্রিজের দুই পাশে একইসঙ্গে দু’টি গাড়ি ওঠানোর ব্যাপারে নিষেধ থাকলেও চালকরা সে  নিয়ম মানছেন না। ব্রিজের উত্তর-পশ্চিম দিকে মেরামতকৃত বেইল ব্রিজের আগে-পরে রয়েছে ভাঙা। উঠে গেছে পিচও।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এই ব্রিজটি ভেঙে গেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। শাহবাজপুর ইউনিয়নের দুটি গ্রাম পুরো ইউনিয়ন কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়বে। শিক্ষার্থীরাও স্থানীয় হাইস্কুলে যেতে পারবে না। তাদের আশঙ্কা, বিকল্প সড়ক না থাকায় সিলেট থেকে আহরিত পাথর, কয়লা, চুনাপাথর, মত্স্য ও কৃষিজাত পণ্য সারা দেশে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজীব আহমেদ বলেন, ‘ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়াকান্দি ও বৈষামুড়া গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। পাশ্ববর্তী রামপুর, রসুলপুর এলাকার মানুষও শাহবাজপুরে আসতে পারবে না। আবার আমাদের এদিক থেকে ইসলামপুর কলেজে যেতেও পারবে না শিক্ষার্থীরা।’

ঢাকা-সিলেট রোডের মাইক্রোবাস চালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ব্রিজটি ভেঙে পড়লে ঢাকা থেকে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হবিগঞ্জের যান চলাচল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ড্রাইভাররা কয়েকদিন টানাহেঁচড়া করে চলতে হবে। এখন ব্রিজের আরেক জায়গায় যদি ভাঙে, তাহলে সবার জন্য বিপদ।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজের দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে সেতুটির মাঝের স্প্যানের গার্ডারে ফাটল দেখা দেয়। পরে সওজের প্রধান প্রকৌশলী একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মাঝখানের স্প্যানে ২০০ ফুট বেইলি ব্রিজ করে দুই লেনে স্থাপন করা হলেও যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি রয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট ১৮ ঘণ্টা ওই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমানেও একই দশা দেখা গেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজীব আহমেদের অভিযোগ, ‘টেন্ডারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই ব্রিজটি ঠিক করা হচ্ছে না। সওজের প্রধান প্রকৌশলীও এসেছিলেন। এরই মধ্যে ব্রিজের উত্তর পাশে ভাঙন ধরলে বেইলি ব্রিজ করে সড়ক যোগাযোগ ঠিক করা হয়েছিল’।

জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু এহতেশাম রাশেদ বলেন, ‘গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ হাইওয়ে পুলিশ করবে। তাদেরও তো লোকবল সংকট আছে। না হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান করবে।’

সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আমির হোসাইন জানান, ‘আতঙ্কের কিছু নেই। ভারী ট্রাক চলাচল ঠিক হবে না। কিন্তু হালকা গাড়ি চলাচল তদারকির জন্যও স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিজের দুই পাশে নোটিশ আছে। আগের ব্রিজের রেলিংগুলো খুব দুর্বল। কোনও ট্রাক বা বাস ধাক্কা লাগলে রেলিং ভেঙে পড়বে নিশ্চিত।’

জানা গেছে, তিতাস নদীর ওপর স্থাপিত ২০৩ মিটার দীর্ঘ  শাহবাজপুর ব্রিজটি ১৯৬৬ সালে নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজের দু’টি স্প্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বেইলি ব্রিজের মাধ্যমে পুনঃস্থাপন করা হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেতুগুলোর পুনঃনির্মাণ প্রক্রিয়ায় এই সেতুর দু’টি স্প্যান পুনঃনির্মাণ করা হয় ১৯৯২-১৯৯৩ সালে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, শাহবাজপুরে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ ও পুরনো ব্রিজটি সংস্কারের জন্য ৬৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। প্রস্তাবিত সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ২১৯ দশমিক ৪৫৬ মিটার ও প্রস্থ ১৪ মিটার। সেতুটি মোট ৬টি স্প্যান, ৫টি পিয়ার এবং ৮০টি পাইলের ওপর নির্মিত হবে। নতুন সেতুতে হালকা যান চলাচলের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা থাকবে।

জানা গেছে, নতুন একটি ও পুরনো সেতুটি মেরামতের জন্য ইতোমধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দরপত্র খোলা হবে। এরপর নভেম্বরের মধ্যই সেতুর কাজ শুরু করতে চায় সওজ।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু এহতেশাম জানান, ‘ব্রিজ ঠিক করতে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। নভেম্বর নাগাদ শুরু হবে আশা করি। এটা তো বড় কাজ। ’

সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আমির হোসাইন জানান, ‘অলরেডি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ব্রিজটি নতুন কাজের টেন্ডার ওপেনিং হবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আমির হোসাইন বলেন, ‘ব্রিজটিকে আরও দুবছর টেকাতে হবে। না হলে সমস্যা হয়ে যাবে। এতে ঢাকা-সিলেট যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এখন যে অবস্থা আছে, তাতে একটু সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চলাচল করলে এসময়টুকু পার হয়ে যাবে। এতে চালকদের সহায়তা লাগবে। তাদের বিশ টনের বেশি মালামাল নিয়ে ব্রিজে ওঠা যাবে না। ব্রিজে ওঠার সময় এই নোটিশ আছে।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

আপনার মন্তব্য

আলোচিত