সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:৪২

বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন খুনের ঘটনায় জামায়াতকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তারা নির্বাচন করল না, ব্যর্থ হলো। নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। আন্দোলন করে সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে এখন গুপ্তহত্যা। এটা তো বিএনপি-জামায়াতে একটা চরিত্র। খুন করাটাই তাদের চরিত্র।

বুধবার ( ৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত সংসদ সদস্য লিটনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘যেহেতু সে জামায়াতের বিরুদ্ধে সব সময় ছিল, এমনকি গোলাম আযম ওখানে মিটিং করতে চেয়েছিল, সেই মিটিং ও করতে দেয়নি, বাধা দিয়েছিল। সেই থেকে জামায়াতের একটা ক্ষোভ ওর ওপর ছিল। ওকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আর অবশেষে তারা সেই হত্যাকাণ্ডটা ঘটাল। লিটন ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে সে পড়াশোনা করতে যায়। সেখানে সে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ করা শুরু করে। ওখানকার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিই এবং সে সংসদ সদস্য হয়।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ খুন, মানুষ হত্যা করা এটা হচ্ছে বিএনপির চরিত্র। কাজেই আজকে লিটন হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমি। সাথে সাথে যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদেরও যেভাবে হোক খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। আর সাংবাদিকদের বলব, চরিত্র হনন করতে চাইলে করেন, কিন্তু একটা মানুষের জীবন যাবে, এই ধরনের ঘটনা না ঘটানোই ভালো। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হলো, সে একটা মহা অপরাধী। আর কিছুই না, যেহেতু সে গোলাম আযমকে বাধা দিয়েছে, যেহেতু জামায়াতকে বাধা দিয়ে দিয়ে সেখান থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে আসছে, ওখানে জামায়াতবিরোধী একটা অবস্থান নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে শক্তভাবে ছিল, যে কারণে আজকে তাকে জীবনটা দিতে হলো।’

একাধিকবার লিটনের ওপর হামলা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওর ওপর বারবার হামলা হয়েছে। একটা ঘটনা আমার খুব খারাপ লাগে। মাঝখানে একটা ঘটনা ঘটে গেল, একটা বাচ্চা ওর গুলিতে আহত হয়। সেটা নিয়ে পত্রপত্রিকা এমনভাবে লেখালেখি করল এবং ওকে একটা অ্যাসাসিন করল। ঘটনা যেটা ঘটল, সেটা আর কেউ তুলে ধরল না, যে ওকে মারার জন্য অ্যাম্বুশ করে রাখা হয়েছিল। যেহেতু ও সব সময় সতর্ক ছিল কাজেই ও কোনোমতে সেখান থেকে বেঁচে আসে। ওই সময়ের গোলাগুলিতে যে ছেলেটা আহত হয়, বাচ্চা; সেও কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগের কর্মী ছিল। কিন্তু সেই ঘটনাটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এমনভাবে লেখা হয়, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তার বন্দুকের লাইসেন্স জব্দ করা হয়। তার অস্ত্রটা নিয়ে যাওয়ার পর থেকে সে আতঙ্কে থাকত, যে যেকোনো সময় তাকে আক্রমণ করবে। ঠিক সেই ঘটনাটাই ঘটল। ওর বাসার ভেতরে ঢুকে ওকে গুলি করে হত্যা করল।’ তিনি আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চরিত্রটাই হচ্ছে অপরাধীদের মদদ দেওয়া। অপরাধীদের লালন পালন করা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গাইবান্ধা এমন একটা জায়গা, বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জ। এখানে একেবারে জামায়াতের একটা সন্ত্রাসী এলাকা। ওই এলাকায় একসময় জামায়াতের এমপিও ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগ করা যায়- এমন অবস্থাও ছিল না। আর বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে জ্বালাও পোড়াও, মানুষ হত্যা করা। এই মানুষ হত্যাটা গাইবান্ধায় সব থেকে বেশি হয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সুন্দরগঞ্জে জামায়াত যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, আওয়ামী লীগের প্রায় দেড়শো থেকে দুইশো নেতাকর্মীর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে এবং পুড়িয়ে দেয়। রেললাইনের ফিশপ্লেট তুলে দিয়ে চারজনকে হত্যা করে। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিয়ে লুটপাট করে, চার পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর আসে ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা প্রকাশ্যে ঢাকা-রংপুর রাস্তা অবরোধ করে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে। নয়জন মানুষকে পুড়িয়ে মারে। ওই পুরো এলাকাটা তাদের কব্জায় ছিল। এরপর ২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত অবরোধ চলাকালেও ওই এলাকায় প্রচণ্ড তাণ্ডব শুরু হয়।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বিরোধীদলীয় আমলের চিত্রও তুলে ধরে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমি যখন বিরোধী দলে তখন আমাদের সংসদ সদস্য এস এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করল। এমনকি হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের সংসদে এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও করতে দেয়নি। একটা নিন্দা প্রস্তাব, একটা শোক প্রস্তাবও তুলতে দেয়নি। অবশ্য এটাতে বিএনপি জড়িত। এরপর যখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো, তখনো ওই একই ঘটনা আমরা দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু হত্যা করা, খুন করা, খুনিদের প্রশ্রয় দেওয়া বিএনপির চরিত্র। তাদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ক্ষমতায় থাক আর বিরোধী দলে থাক, হত্যা তারা করেই যাবে। ওই একটা কাজে তারা সফলতা দেখাতে পারে। দেশের উন্নয়ন তারা করতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমি এটা বলব, আমাদের লিটনের হত্যাকাণ্ড আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। সেই সাথে সাথে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আরো সোচ্চার হতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কাজেই তার জন্য সবাই আমার মনে হয় প্রস্তুত হবেন।’

প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বাধীন সরকারের তিন বছর পূর্তির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। আর ১২ তারিখ আমরা শপথ নিয়েছিলাম। আমাদের তিন বছর পূর্ণ হলো। এই তিন বছর আমরা অত্যন্ত সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করেছি। দেশের উন্নয়নের কাজের গতিটা আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ জন্য আজকে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে। মানুষ আজকে খেয়েপরে বাঁচতে পারছে। গ্রাম থেকে শহর সকল পর্যায়ে উন্নতি হচ্ছে।’

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত