সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুলাই, ২০১৭ ০২:১৮

আমি ভীত নই, সব প্রকাশ করব : ফরহাদ মজহার

গার্ডিয়ানকে সাক্ষাতকার

রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন । অপহরণের ঘটনার পর এই প্রথম তিনি কোনো বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।

 ঘটনা সম্পর্কে ফরহাদ মজহার বলেন, তারা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছিল, আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিল এবং চোখ বেঁধে ফেলেছিল। তারা হাঁটু ব্যবহার করে আমাকে গাড়ির মেঝের সঙ্গে চেপে রেখেছিল।

বুধবার দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ফরহাদ মজহার বলেন, গত সপ্তাহে ভোর ৫টার দিকে তাকে কে বা কারা বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে তুলে নেয় তা তিনি বুঝতে পারেননি। সেদিন সকালে চোখে সমস্যা হচ্ছিল, তাই ওষুধ কিনতে বাড়ি থেকে বের হই। হঠাৎ তিন ব্যক্তি আমার পাশে এসে উপস্থিত হয় এবং একটি সাদা মিনিবাসে (মাইক্রোবাস) আমাকে তুলে নেয়।

তিনি বলেন, এ সময় তিনি পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি বের করার সুযোগ পান এবং তার স্ত্রীকে ফোন করেন। তিনি বলেন, এটি ছিল একটি ছোট্ট ফোনকল। আমি ফিসফিস করে বললাম- ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। অপহরণকারীরা বুঝে ওঠার আগেই আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি।

এর পর ওই ব্যক্তি ফরহাদ মজহারের চোখ বেঁধে ফেলে এবং মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় বলে গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান তিনি। এ সময় তিনি অপহরণকারীদের মুক্তিপণও দিতে চান। তিনি বলেন, এই বিষয়ে তারা আমাকে ফোন ব্যবহার করতে দেয় এবং কয়েকবার আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিনিবাসটি চলতে থাকে। তারা আমাকে অপমান করে, মাঝেমধ্যে গালিও দেয়। তারা আমাকে চড়ও মারে, বলেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা আমাকে মুক্ত করে দেবে বলে জানায়। এর পর একটি নির্জন ও কিছুটা অন্ধকার স্থানে আমার চোখ খুলে দিয়ে চলে যায়। তারা আমাকে একটি বাসের টিকিট দেয় এবং বলে খুলনা শহর থেকে বাসে চেপে ঢাকায় ফিরে যেতে। আমি কিছু দূর হাঁটি এবং খুলনার একটি বিপনিবিতানে পৌঁছি, যেখানে রাত সোয়া ৯টার বাসে ওঠার আগে কিছু খাবার খাই।

ফরহাদ মজহার বলেন, কারা তাকে অপহরণ করেছিল সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তিনি বলেন, অপহরণকারীরা সাধারণ পোশাকে ছিল। আমি জানি না তারা কারা বা কোন দলের সদস্য। বন্দি অবস্থায় আমি বেশ কয়েকবার আমার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। আমাকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা ছেড়ে আসার পর পুলিশ চাইলে আমার অবস্থান শনাক্ত করতে পারত। আমি অবাক হয়েছি কেন পুলিশ খুলনা পৌঁছার আগেই মাইক্রোবাসটিকে আটক করতে পারল না।

ফরহাদ মজহার জানান, এখনো তিনি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছু সময় লাগবে। তিনি বলেন, কিন্তু আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা প্রকাশ করতে আমি ভীত নই। বেশিরভাগ মানুষই গুমের ঘটনা থেকে ফিরে আসার পর রহস্যজনকভাবে নীরব হয়ে যায়। আমি যখন কাজে ফিরব তখন এই বিষয় নিয়ে কাজ করব। আমাদের এই অপহরণ করার সংস্কৃতির সমাপ্তি ঘটাতে হবে।

এদিকে বারডেম হাসপাতাল থেকে গতকাল বিকালে ফরহাদ মজহারকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর পর তাকে শ্যামলীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা আগের থেকে ভালো বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল ৫টায় বারডেম হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরহাদ মজহারকে রিলিজ দেন। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তাকে হাসপাতাল থেকে শ্যামলীর বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত