সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ জুলাই, ২০১৭ ০২:২১

৫৭ ধারা নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর ‘সাফাই’: সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ক্ষোভ ও প্রতিবাদ

প্রতীকী ছবি: সংগ্রহ

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে জাতীয় সংসদে দেওয়া তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকেরা বলেছেন, তথ্যমন্ত্রীর এই সাফাই নির্লজ্জ গণমাধ্যমবিরোধী আচরণ।

বর্তমান সরকার–সমর্থক এবং সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুই অংশই বৃহস্পতিবার বিবৃতি ও সমাবেশ করে এই ক্ষোভ জানায়।

গত বুধবার (১২ জুলাই) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ৫৭ ধারা নিয়ে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

ওই দিন জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৬ ও ৫৭ ধারা কেবল সাংবাদিকদের জন্য করা হয়নি। এটি সাধারণ দণ্ডবিধি। এটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য, নারীর নিরাপত্তা ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে। এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ তবে উচ্চ-আদলতে গেলে জামিন পাওয়া যায়। এই আইন সংবিধানে সঙ্গে সাংঘর্ষিক এটা কেউ প্রমাণ করতে পারেনি।

ওই সময় মন্ত্রী আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ওই দুই ধারা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে খড়গ আরোপের জন্য করা হয়নি। ডিজিটাইজেশনের ফলে গণমাধ্যমের বিশাল প্রসার ঘটেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ডিজিটাল স্পেস তৈরি হয়েছে। এর ফলে অনেকে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি, চরিত্র হনন, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির মত অপরাধ করে। তখনই কেবল এই আইনের প্রয়োগ হয়। তাই এটা শুধু সাংবাদিকদের জন্য করা হয়েছে, এ কথাটি ঠিক নয়।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ অনলাইন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক ও টুইটারে চরিত্রহনন করে পোস্ট দিলে এই আইনের আওতায় আসবে। এই আইন নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এই আইনে একটা পর্যায়ে জামিনযোগ্য। নিম্ন আদালতে জামিন পায় না, উচ্চ আদালতে গেলে জামিন পাওয়া যায়। এরকম ৩০ এর অধিকে আইন আছে জামিন অযোগ্য।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিবৃতিতে সরকার–সমর্থক বলে পরিচিত বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীসহ বিএফইউজের সব অঙ্গ ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।

তারা বলেন, দেশের সাংবাদিক সমাজ যখন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগে বিপর্যস্ত, দেশে-বিদেশে এই আইনের অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তখন এর পক্ষে তথ্যমন্ত্রীর সাফাই নির্লজ্জ গণমাধ্যমবিরোধী আচরণ। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা গণমাধ্যমবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেতনার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু এই বক্তব্যই নয়, গণমাধ্যমকর্মীদের ওয়েজবোর্ড নিয়েও মন্ত্রীর আচরণ অগ্রহণযোগ্য।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদন বা লেখায় কেউ ক্ষুব্ধ হলে যেখানে প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে ঠুনকো অজুহাতে সাংবাদিকদের শায়েস্তা করার জন্য ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। নেতারা প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণমাধ্যমসংক্রান্ত কোনো বিষয় যুক্ত করতে হলে জ্যেষ্ঠ সম্পাদক, সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা করার আহ্বান জানান।

এদিকে, বিএফইউজে-ডিইউজের বর্তমান সরকারবিরোধী অংশটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলোপের পাশাপাশি প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলেরও দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

৫৭ ধারার পক্ষে সংসদে তথ্যমন্ত্রীর সাফাইয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, গত এক মাসে ৫৭ ধারায় বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নতুন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

বিএফইউজের এই অংশের সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত