নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ আগস্ট, ২০১৭ ১৩:২৪

পেয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যবসায়ী তোষণনীতি দায়ি: ক্যাব

পেয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যবসায়ী তোষনণীতিকে দায়ি করেছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। একই সঙ্গে অবিলম্বে বাজার মনিটরিং জোরদার ও টিসিবিকে কার্যকর করুণ-ক্যাব চট্টগ্রাম।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব বলছে, দেশে বর্তমানে পেয়াজ এর চাহিদা মেটাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভর করে, আর ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন টালবাহানায় পেয়াজের সরবরাহ সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। বিশেষ করে ভারতে পেয়াজর মূল্য বৃদ্ধি হলে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, মায়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেয়াজ আমদানির কোন উদ্যোগ না নিয়ে ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

সংকটকালীন সময়ে পেয়াজ সংকট মোকাবেলায় টিসিবিকে কাজে না লাগিয়ে টিসিবিকে অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে রেখেছে বলে অভিযোগ ক্যাবের।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন ব্যবসা বাণিজ্যে মূল উপসর্গ উৎপাদক, বিক্রেতা, শ্রমিক ও ভোক্তা। আর দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হলে এ পক্ষগুলির স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে যাবতীয় নীতি প্রণয়ন করার কারণে অন্যপক্ষগুলির স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। ফলে দেশে ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সেকারণে ব্যবসায়ীরা নীতি নৈতিকতা বাদ দিয়ে যে যেভাবে পারে মজুত করে সরবরাহ সংকট তৈরি করে ১০০-১৫০শতাংশ পর্যন্ত লাভে পণ্য বিক্রি করছে। ভারতে পেয়াজের দামবৃদ্ধির অজুহাত তুললে বর্তমানে মজুত পেয়াজগুলি ৩-৬ মাসে পূর্বে আমদানি করা এবং পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্বেও দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটলেও সরকার আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদেরকে যথাযথ নজরদারি করেনি। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেখানো পথ অনুসরণ করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও বেপরোয়া ভাবে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দেখার জন্য বাজারেও কেউ নেই। সরকারের মাঠ পর্যায়ে নজরদারির দুর্বলতার কারণে ১৭-১৮% পর্যন্ত চালের শুল্ক হ্রাস করে চাল আমদানির পরেও চালের বাজারে তার প্রতিফলন ঘটেনি, পুরো টাকা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে, সেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারও অস্থিরতা তৈরি করে পুরো টাকা হাতিয়ে নেবার পাঁয়তারা করছে একটি মহল।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বিকল্প বাজার হিসাবে টিসিবিকে কার্যকর করার জন্য দাবী করলেও ব্যবসায়ী নেতারা টিসিবিকে সক্রিয় করতে সরকারকে বিভ্রান্ত করে বাঁধা প্রদান করছে। তাদের যুক্তি হলো টিসিবি অথর্ব প্রতিষ্ঠান এবং লোকসানি। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার পুরোটাই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দখলে, ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরির পরিবর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার পুরোটাই ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া দখলে রয়েছে।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ক্যাব বছরব্যাপী বাজার মনিটরিং এর দাবি করে আসলেও মোবাইল কোর্ট আইন’০৯ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলার কারণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে না পারায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে মজুতদারি, সিন্ডিকেট করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজারে আগুন দিচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কোন প্রকার নজরদারি ও হস্তক্ষেপ না থাকায়, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন ও অস্থির হয়ে আছে। আর ব্যবসায়ীরা এটাকে স্বাভাবিক বললেও প্রকৃতপক্ষে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এটা বাড়তি বোঝা যা সরকারের অনেকগুলি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ম্লান করে দিচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন দেশে পেয়াজের চাহিদা বার্ষিক ২০-২২ লাখ মে: টন আর দেশে উৎপাদিত হয় ১৭-১৮ লাখ মেঃটন। তবে কোরবানির ঈদে চাহিদা একটু বাড়লেও সরবরাহ জটিলতায় ও মজুতদারির কারণে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটে কিছু ব্যবসায়ী। আর দেশীয় কৃষকদেরকে প্রণোদনা প্রদান করা সম্ভব হলে এবং ভোক্তা হিসাবে সচেতন হলেই এই সংকট সহজেই মোকাবেলা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ডঃ আতিউর রহমান পেয়াজ, মসলা ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নিলেও ঋণগুলি প্রকৃত কৃষকের কাছে না পৌঁছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের নিজেদের চলতি ঋণগ্রহীতাদের মাঝে এসমস্ত ঋণগুলি বিতরণ করায় পেয়াজ ও মসলা উপাদান খাতে সরকারের প্রণোদনা গুলির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হয়নি। ফলে দেশীয় কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হয়নি, দেশীয় উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার খেসারত পুরো দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে। তাই দেশীয় উৎপাদক ও কৃষক পর্যায়ে সরকারের প্রণোদনা ও ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সহ-সভাপতি হাজী ইকবাল আলী আকবর ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক এএম তৌহিদুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত