সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৩:৩৯

‘নিজেদের খেয়াল খুশিমতো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাবে না’

আইনের যথাযথ অনুসরণ না করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ক্ষমতার অপব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে লক্ষীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের মামলার শুনানিকালে হাইকোর্ট এ পর্যবেক্ষণ দেন।

আদালত বলেন, মোবাইল কোর্ট রাষ্ট্রীয় সামাজিক প্রেক্ষাপটে অতীব প্রয়োজনীয়। কিন্তু অপব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক সময় দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে না গিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এর মাধ্যমে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে চান। এটা চলবে না।

গত ৫ ডিসেম্বর লক্ষীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মুর্শিদুল ইমলাম এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সালাউদ্দিন শরীফকে ৩ মাসের সাজা প্রদান করেন। তবে এর চব্বিশ ঘণ্টা পর ৫ হাজার টাকা বন্ডে ওই ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের জামিন মঞ্জুর করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সিভিল সার্জনকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বুধবার ছিল রিটের শুনানি।

বুধবারের শুনানি শেষে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন লক্ষ্মীপুরের  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে ভবিষ্যতে এমন কোনো পদ দেওয়া যাবে না যাতে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে।

রিটের শুনানিকালে এডিসি, ইউএনও ও সাবেক সিভিল সার্জনকে ভৎর্সনা করে আদালত বলেন, আপনারা সমাজের সম্মানিত মানুষ। আপনারা হাতাহাতি করবেন এটা সভ্য সমাজের কেউ করতে পারে। এটা লজ্জার ব্যাপার।

আদালতে এডিসির পক্ষে  ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী বাসেত মজুমদার আর ইউএনওর পক্ষে ছিলেন ইউসূফ হোসেন হুমায়ূন।

সিভিল সার্জনকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মুর্শিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে শেখ মুর্শিদুল ইসলামকে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়,  লক্ষ্মীপুর ডিসি কলোনির ভেতরে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কাকলি শিশু অঙ্গন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সালাহ উদ্দিন শরীফ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মুর্শিদুল ইসলামের মধ্যে কথাকাটাকাটি এবং একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সালাহ উদ্দিন শরীফকে ‘অসদাচরণের দায়ে’ তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী কামাল হোসেন নিয়াজী ও আশফাকুর রহমান রিটটি দায়ের করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন ও আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত