সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ২৩:৩৪

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া আইসিটি আইনের চেয়েও ভয়াবহ’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া আইসিটি আইনের চেয়েও ভয়াবহ। কেননা, যে যে কাজের কারণে ৫৭ ধারায় অভিযুক্ত করা যেত, সেসব কাজকে এই আইনে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৯টি ধারার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৪টি আইন জামিনযোগ্য বাকি সব কয়েকটি জামিন অযোগ্য। বিশেষ করে সাংবাদিকরা যেসব ধারায় বিপদে পড়তে পারেন এ রকম সব ধারাতে জামিন অযোগ্য। এই আইন ভয়াবহ ও অনিরাপদ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে - নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড.শাহদীন মালিক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

আলোচনা সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আগে তো এই আইনে মামলা করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন ছিল কিন্তু এখন পুলিশ চাইলেই মামলা করতে পারবে। পুলিশ চাইলেই বিনা মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। এটা শুধু কালো আইন নয় বরং কুচকুচে কালো আইনের চেয়েও কালো’

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের কথা উল্লেখ করে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, সে দেশের সংবিধানে ১৯৭১ সালে বিধান করা হয় ওদের সংসদ বাক-স্বাধীনতা খর্ব হয় এমন কোনো আইন পাস করতে পারবে না। অতএব কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বাক-স্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন পাস করতে পারে না।

তিনি মিয়ানমারের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মিয়ানমারে গত শতাব্দীর ৬০ এর দশক থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কোনো পত্রিকা প্রকাশ হতো না। সেখানে বাক-স্বাধীনতা এতটা সীমিত। তারা যে কতটা অত্যাচারী তা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট হয়েছিল। সে রিটে আদালত রুলও জারি করেছিলেন। তখন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, এই আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। পরে এই আইনের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম নাম দেয়া হয়েছে। সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইনকে করা হয়ে আরও ভয়াবহ। এই আইনের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনা বিচারে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকের কারাগারে রাখা।’

লিখিত বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ৫২ ধারা থেকেও ভয়াবহ ও অনিরাপদ।’ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধরা নিয়ে আমাদের সচেতন মহল যতটা আলোচনা হয়েছে সদ্য বিলুপ্ত আইসিটি অ্যাক্ট এর ৫৭ ধারা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়েছিল। ৫৭ ধারায় অপরাধ এর সংজ্ঞার অস্পষ্টতা আর সেটার শাস্তির পরিমাণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বড় বাধা তৈরি করবে সেটা বোঝার জন্য রকেট বিজ্ঞানী হতে হয় না।

তিনি বলেন, আইনের সমালোচনায় অনেক সময়ই সরকারের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন অনেক 'বুদ্ধিজীবী'কে বলতে শুনেছিলাম, এই ধারার অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে নাকি সেটার অপব্যবহার হতে পারে। ৫৭ ধারা দিয়ে করা কয়েকটি নিপীড়ন এর ঘটনার প্রতি সরকারের মন্ত্রীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলে তাদেরও বলতে শোনা গিয়েছিল, তারা এর 'অপব্যবহার রোধে' ব্যবস্থা নেবেন। অথচ খুব সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান বলে আইনে অপরাধের ব্যাখ্যা অস্পষ্ট রাখা একটা সচেতন পরিকল্পনারই অংশ। এটা করাই হয় যেন ইচ্ছামতো যে কাউকে অভিযুক্ত করে হয়রানি করা যায়।তাই আসলে সরকার এই আইন অপব্যবহার করেনি, তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য 'ব্যবহার'ই করেছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, এবার আইসিটি অ্যাক্টের জায়গায় এসেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এটা করতে গিয়ে একটা তৃতীয় শ্রেণির ভাঁওতাবাজি করেছে সরকার। শিশুকে বুঝ দেয়ার মতো করে ৫৭ ধারা বাদ দিয়েছে তারা, যেন সেটা দেখেই সবাই খুশি হয়ে যাবে। অবিশ্বাস্য ভাবে দেখি আইনমন্ত্রী এই ধারা বাদ দিয়ে সবার কথা রাখার দাবি করছেন! অথচ আমরা অনুমোদিত খসড়াটিতে দেখছি দুই একটা ক্ষেত্রে সাজার পরিমাণ সামান্য এদিক-সেদিক করে ৫৭ ধারার সবকিছু ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ২৫, ২৮, ২৯ আর ৩১ ধারায়। এতে সরকারের দারুণ মজা হয়েছে -এখন কেউ মুখস্থ ৫৭ ধারার কথা বলে ফেলতে পারবে না। হ্যাঁ 'পুরনো বিষ'টা রয়েই গেছে, যদিও বোতলটা নতুন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত