সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ মার্চ, ২০১৮ ২২:১৫

প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো: প্রধানমন্ত্রী

প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২১ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় এ কথা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেব।

তিনি বলেন, আমার বাবাও এদেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন। মা, ভাই, ফুফুসহ পরিবারের সকলকে হারিয়েছি আমি। এই শোককে শক্তিতে পরিণত করেছি। আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সবাই সুন্দর জীবন পাবে, উন্নতভাবে বাঁচবে-এটাই আমার চাওয়া।

তিনি বলেন, আমার রাজনীতি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তাই নৌকা মার্কায় আবারও আপনাদের কাছে ভোট চাই। ওয়াদা করুন নৌকাতে আবার ভোট দেবেন। আমরা ক্ষমতায় আসলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখারও ওয়াদা করছি।

এসময় চট্টগ্রামকে ঘিরে নেওয়া ১৪ হাজার কোটি টাকার ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। তার জনসভাকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ছিল উৎসবের আমেজ। নানা রঙ্গের ব্যানার ফেস্টুন ও নৌকা প্রতীক নিয়ে জনসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন লাখো মানুষ।

বিএনপি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বেছে নিয়েছিলো খালেদা জিয়া। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন-ইয়াজউদ্দিন তারই পছন্দের মানুষ। তারাই খালেদার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুদকের তদন্তের পর আদালত রায় দিয়েছে। অথচ তারা সেই রায়ও মানে না। বিএনপি কিছুই মানে না। উল্টো আন্দোলনের হুমকি-ধমকি দেয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একুশ বছর পর ক্ষমতা পেয়ে দেশ পাল্টে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি আমরা। অথচ বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি লুটপাট করেছে, বিদেশে টাকা পাচার করেছে। এতিমের টাকা মেওে খেয়েছে। বাংলাদেশকে তারা জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলা ভাইয়ের দেশ বানিয়েছে। দুর্নীতিতে দেশকে করেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের সাথে জনগণ নেই। থাকতে পারে না।

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেছিলাম নিজের অর্থায়নে করব পদ্মা সেতু। সেটি করতে পেরেছি বলে আজ বিশ্ববাসী সমীহ করে বাংলাদেশকে।

আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের শান্তি চায়, উন্নয়ন চায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। যেখানে বিদ্যুৎ নেয়ার সুবিধা নাই সেখানে স্বল্পমূল্যে সোলার নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। আজ দেশে কাজের অভাব নেই। বদলে গেলে গ্রামও।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর দীর্ঘদিন উন্নয়ন হয়নি। যখন ক্ষমতা নিই তখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ৯৬সালে ক্ষমতা পেয়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করেছি। কিন্তু ২০০১সালে ভারতে কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিদেশিদের কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসলো বিএনপি। ক্ষমতা পেয়েই তারা একের পর এক নেতাকর্মীকে হত্যা করতে থাকে। চট্টগ্রামে একসাথে ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এমনকি নিজ দলের নেতা জামাল উদ্দিনকে অপহরণ শেষে লাশ গুম করে তারা।

বিএনপির শাসন আমলকে দুঃশাসন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকাকালে এ চট্টগ্রাম দশ ট্রাক অস্ত্র পাওয়া গেছে। ক্ষমতায় থেকে খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। তার ছেলেরাও বিদেশে টাকা পাচার করেছে। আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের আদালত সেটি প্রমাণও পেয়েছে। এতিমের টাকা চুরি করেছে তারা। একটি  টাকাও এতিমকে দেয়নি তারা।

গত নির্বাচনের পূর্ববর্তী অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে সারা দেশে অরাজক এক পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপি জামায়াত জোট। খালেদা জিয়ার নির্দেশে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলার গায়ে ছুড়ে মারা হয় পেট্রোল বোমা। স্কুলে যাওয়ার সময় শিশু সন্তানের গায়ে ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন। পুলিশ, বিজিবি সদস্যদের হত্যা করা হয়। এভাবে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করে পাঁচ শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে বিএনপি-জামায়াত। কোন মানুষ কোন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে পারে না।

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মা, বাবারা দেখেন আপনার ছেলে কোথায় যায়, কার সাথে মিশে। শিক্ষকরা খেয়াল করুন দীর্ঘদিন কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত আছে কিনা। ভালভাবে খতিয়ে দেখুন- আপনার প্রিয় সন্তান কিংবা শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদে জড়ালো কিনা। দেশটাকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নয়ন হয় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগামীতে ক্ষমতায় আসলেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে। মনে রাখবেন নৌকা মার্কা ভোট দিলেই দেশের উন্নয়ন হয়। আপনাদের ভালবাসা ও স্নেহ  নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই আমি।

বিভিন্ন প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরো চট্টগ্রামকে উন্নয়নের আওতায় এনেছি আমরা। পুরো বাংলাদেশে চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। নারীদের সুবিধার্থে ১৮ হাজার কমিউনিটি সেন্টার গড়েছি। ৩০ প্রকার ওষুধ বিনা মূল্যে দিচ্ছি। এক কোটি ৩০ লাখ মায়ের কাছে উপ-বৃত্তির টাকা তুলে দিচ্ছি। ৩৫ কোটি ৪২ হাজার নতুন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বছরের প্রথম দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করায় আজ হাতে হাতে মোবাইল। ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়েও মিলছে ডিজিটাল সেবা। আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, আর বিএনপি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নিজেদের ভাগ্যই পরিবর্তন করে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তাসহ অসহায়দের ভাতা দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনীদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। চাকরিতেও তাদের জন্য কোটা রয়েছে। কারণ আমরা মনে করি মুক্তিযোদ্ধারাই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা জীবনবাজি না রাখলে এদেশ স্বাধীন হতো না, হতো না আজকের এ জনসভাও।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক। অথচ বিএনপি ও তাদের দোসরা চায় দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বানাতে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না, কোন কুঁড়েঘর থাকবে না। যাদের ঘর নেই তাদের ঘর দেয়া হবে। যাদেও  জমি নেই তাদেও খাস জমি দেয়া হবে। যাদেও জমি আছে তাদেও ঘর কওে দেয়া হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদেও সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, শামসুল হক চৌধুরী এমপি, আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভী এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি , সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, ফজিলাতুনেসা ইন্দিরা এমপি, ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি,সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়ব,  সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল , উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক  ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম সামসুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম প্রমুখ।

জনসভা পরিচালনা করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল, মহানগরের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শ্রমিক লীগ নেতা সফর আলী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, জেসিআই চিটাগাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির প্রমুখ।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এ জনসভায় চট্টগ্রামের ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ১৩ টি উদ্বোধন করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, পটিয়া উপজেলার খোদারহাট সেতু, বোয়ালখালী উপজেলার মিলিটারিপুল, পটিয়ায় শেখ রাসেল ভাস্কর্য ও মঞ্চ, ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট-মাইজভান্ডার সড়ক এবং নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও হাজেরা তজু ডিগ্রী কলেজ, মিরসরাই উপজেলার প্রফেসর কামাল উদ্দীন চৌধুরী কলেজ, রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজ, পটিয়ার মীর খলিল ডিগ্রী কলেজ ও বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রী কলেজের একাডেমিক ভবন।

যে ২৮ টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে - নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রিং রোড নির্মাণ প্রকল্প, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার ডলু নদীর তীর সংরক্ষণ, পটিয়া উপজেলার কালারপোল সেতু নির্মাণ প্রকল্প, পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী-টইটং আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং কেরাণীহাট-সাতকানিয়া-গুণাগরী মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, নগরীর অনন্যা ও কল্পলোক আবাসিক এলাকা, রহমতগঞ্জ, এফআইডিসি কালুরঘাট, অক্সিজেন, মইজ্যারটেক, কাট্টলী ও মনসুরাবাদ ৩৩/১১ কেভি নতুন জিআইএস বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত