সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ মে, ২০১৮ ০২:০৫

গাড়ির বাইরে থাকলে হাত যাবেই: প্রধানমন্ত্রী

যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে যাত্রীদের বা রাস্তায় হাঁটার ক্ষেত্রে পথচারীদের নিয়ম মেনে চলাচল করার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাফিক আইনের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির জন্য গণমাধ্যমকে অনুরোধও করেছেন তিনি। বলেছেন, গাড়ির বাইরে হাত রাখলে হাত যাবেই।

সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান শেখ হাসিনা।

গণপরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য দূর করতে শৃঙ্খলা ফেরাতে আর চালকদের সাজা বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে জানতে চান একজন সাংবাদিক।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী চালকদের শাস্তির পাশাপাশি যাত্রী এবং পথচারীদেরকেও নিরাপদে চলার জন্য আইন মানার তাড়িদ দেন।

বলেন, ‘হাত বাইরে ঝুলিয়ে রাখেন একটা গাড়ির, তাহলে তো হাত যাবেই। আপনারা যার হাত গেল তার জন্য কান্নাকাটি করছেন। কিন্তু তিনি যে ট্রাফিক নিয়মটা মানল না, বা গাড়িতে চলার যে নিয়মটা, সেটা মানল না, আপনি সেটা কী করে দেখবেন?’

‘মোটর সাইকেলে যাচ্ছে, হেলমেট পরবে না। অ্যাক্সিডেন্ট হলে দোষ কার? ড্রাইভারের বুঝলাম। কিন্তু আপনি হেলমেট পরবেন না কেন?’

‘গাড়িতে বসবেন সিলবেল্ট লাগাবেন না। এই সিটবেল্ট না লাগানোর কারণে অ্যাক্সিডেন্ট হলে দেখা যাবে যার সিটবেল্ট লাগানো, সে মারা যায় নাই, কিন্তু যার সিটব্যাল্ট নাই, সে মারা গেছে।’

‘দোষ কার? রাস্তার দোষ। দোষ কার? সড়ক মন্ত্রীর দোষ। দোষ কার? ড্রাইভারের দোষ। কিন্তু যিনি বসেছিলেন, তিনি যে আয়েশ ওভাবে করে বসেছিলেন, সেটা খেয়াল করলেন না?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা দুর্ঘটনা হলে একটা মানুষ মারা যায়, একটা ছেলে হাত বাইরে রাখল, তার হাতটা চলে গেল। একটা মায়ের সাথে একটা শিশু রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা মা মারা গেল বা শিশু মারা গেল।’

‘দুর্ঘটনাগুলো যখন ঘটে, তখন আপনারা এটা হিসাব করে দেখেছেন, যে ঘটনা ঘটার জন্য যে পথচারী তার কী ভুল আছে? সে কতটুকু দায়ী আর যে পথচারী সে কতটুকু দায়ী?’

‘দুই গাড়ির চাপা পড়ে মা মারা গেলেন, দুই গাড়ির চাপায় মা ঢুকলেন কেন? তাহলে আপনি কাকে অপরাধী করবেন? কাকে শাস্তি দেবেন?’

‘আমরা বিদেশে থেকেছি, পায়ে হেঁটে চলেছি। বাসে চলেছি, টিউবে চলেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গাড়িতে চলি। কিন্তু বিদেশে আমার বোন বাসে করেই অফিস করে। বোনের মেয়েরাও বাসে করেই যায়।’

‘সেখানে ট্রাফিক রুলটা মানতে হয়। এখানে কেউ মানে? মানে না। আপনি বাসে চড়ে যাচ্ছেন। আপনি কেন হাতটা বাইরে রাখবেন? এটা তো নিষেধ আছে। কোনো মতেই আপনি আপনার হাত বাইরে রাখতে পারেন না।’

পথচারীদের সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ

‘সবাই চালকের শাস্তি চাচ্ছেন, খুব ভালো কথা। চালক বেপরোয়া বা চালক ঠিক মত চালাচ্ছে না, তার জন্য দু্র্ঘটনা ঘটবে, এটাও যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে রাস্তায় চলার কিন্তু একটা নিয়ম আছে। কিন্তু সে নিয়মটা আমরা কতজন মানি?’

‘গাড়ি যদি বা দিক দিয়ে চলে সেখানে যখন আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন, তখন আপনাকে ডান দিক দিয়ে হাঁটতে হবে, যাতে আপনি দেখতে পারেন।’

‘যখন আপনি রাস্তা পার হবেন, রাস্তা পার হওয়ার জন্য হয় ফুট ওভারব্রিজ করা আছে, অথবা আন্ডারপাস করা আছে। আপনি কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ দিয়েই পার হবেন।’

‘একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে আসছে। হঠাৎ আপনি হাত দিয়ে থামাতে যেয়ে  দৌড় মারলেন। আপনি এক্সিডেন্ট করলেন। আপনি কাকে দোষ দেবেন? চালকের? নাকি নিজের?’

জনসচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ

সংবাদ সম্মেলনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী। বলেন,‘আমাদের যত বেসরকারি টেলিভিশন আছে… আমার একটা অনুরোধ আছে, আপনারা কয়েকটা সেকেন্ড একটু ব্যবহার করেন। রাস্তা পারপারের সময় কী করণীয়, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় কী করণীয়…।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ড্রাইভারকে শাস্তি দিতে হবে, বুঝলাম, দেব। কিন্তু যাত্রীরা, যারা পথ পারাপার করে, তারা, তারা নিয়মটা মানে কি না, সেটাও দয়া করে আপনারা এ ব্যাপারটায় একটু জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন। এটা আপনাদের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ।’

‘আমি বলেছি, প্রত্যেকটা স্কুলে, তথ্যমন্ত্রী এখানে আছেন। অন্তত টেলিভিশনে অন্তত একটা ইয়ে দেন, যে ট্রাফিক রুলগুলো কীভাবে মানতে হবে।’

‘এই সচেতনতাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মা বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তা পার হবেন, দৌঁড় মারবে কেন? যারা গাড়ি চালান, তারা জানেন, আপনি চট করে তো ব্রেক করতে পারবেন না।’

দুর্ঘটনার পর চালককে মারধরের প্রবণতা ছাড়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ধাক্কা খেয়ে একটা মানুষ পড়ে গেল, ড্রাইভার ভয়ে আর গাড়ি থামায় না। কারণ সাথে সাথে তাকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। ফলাফলটা কী দাঁড়ায় তা জানেন? আরও ভয়াবহ।’

‘কারণ, সে তখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য যে পড়ে যায়, তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যায়। ওই লোকটা বেঁচে যেত, কিন্তু সে তখন মৃত্যুবরণ করে।’

‘একটা ধাক্কা খেয়ে মানুষ পড়ে গেলে, সাথে সাথে গাড়ি থামাতে হবে, তাকে সাহায্য করতে হবে। সেটা করা হয় না, কেন করা হয় না।’

রাজধানীতে রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং এবং দেয়া, কিছু লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিতে ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বলেন, ‘আমাদের ফুটওভার ব্রিজ তো সব জায়গায় আছে। এই ফুটওভারব্রিজ রেখে দিল দৌড়। এটা যেন বন্ধ হয়, আপনাদের প্রচারটা চাই। সহযোগিতা চাই।’

চালকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ড্রাইভারদের জন্য আগে তো কোনো ট্রেইনিং ছিল না। কিন্তু আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রেইনিং করিয়ে দেই তাদের।’

‘ড্রাইভারদের বদলে অনেক সময় হেলপাররা চালায়। ওটা বন্ধ করতে হবে। এই ডিসিপ্ল্যানটা আনতে হবে। এটা আমাদের দেখতে হবে।’

‘ড্র্রাইভার অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি পাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’

‘স্বচ্ছলতা যানজট বাড়াচ্ছে’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে, গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে।

যানজট মোকাবেলায় নতুন নতুন সড়ক, ফ্লাইওভার করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘মেট্রোরেল হচ্ছে, এক্সপ্রেসওয়ে করে দিয়েছি। যতই করি, অর্থনৈতিকভাবে ততই স্বাবলম্বী হয়। যারা একখান গাড়ি চালাত, তাদের পরিবার এখন তিন খান গাড়ি চালায়।’

‘ট্রাফিক জ্যাম তো পৃথিবীর সব দেশেই আছে। লন্ডনে কয় ঘণ্টা আরে বের হতে হয়? কোনো গ্রোগ্রামে গেলে তিন ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। আমাদের এখানে তো গাড়ি চলে, ওখানে চলেও না, একটার সাথে একটা লেগে যায়।’

‘একই অবস্থা ইতালিতে। যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই একই অবস্থা। এটা বাস্তব। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আন্ডারগ্রাউন্ড রেল যেন করা যায়, তার জন্য সমীক্ষা শুরু করে দিয়েছি।’

‘রাস্তাগুলো ফোর লেন করা, পূর্ব পশ্চিম রাস্তা করা, অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

‘নয় বছরে যে কাজ করে দিয়েছি, শুকুর করেন। ধন্যবাদ দেন। আর যাতে ভোটটা পাই, সেটাও দেখেন। যাতে সেটা অব্যাহত থাকে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত