১৩ জুন, ২০২০ ২০:১৯
পিতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মো. নাসিম।
পিতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। আর পুত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ছিলেন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা। পিতা জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন শহীদ এম মনসুর আলী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আনুগত হওয়ার কারণে কারাগারেই প্রাণ দিতে হয়েছে। আর তার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজপথে ছিলেন সক্রিয়। যেকোন আন্দোলনে ছিলেন অগ্রসৈনিক।
গত ১ জুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তির পর করোনাভাইরাস পজেটিভ আসে মোহাম্মদ নাসিমের। এরপর গত ৫ জুন ভোররাতে ব্রেন স্ট্রোক হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রাজিউল হকের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপর ছিলেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। শনিবার সকাল ১১ টা ১০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল, পাবনায়। পাবনায় তার পড়ালেখা ও ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি। তবে এম মনসুর আলীর সন্তানের ছাত্ররাজনীতি শুরু হয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে। পরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মৃত্যুর আগ পর্যন্তই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিই করে গেছেন। নিজের ছাত্র রাজনীতির সম্পর্কে তিনি বলেন, বুঝে অথবা না বুঝে যে কারণেই হোক আমি তখন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতাম। ১৯৬৭ বা ৬৮ সালে পাবনায় এক জনসভা শেষে বঙ্গবন্ধু আমাদের বাসায় আসলেন। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে আমাকে খুঁজলেন, বললেন- নাসিম কোথায়? আমি ভয়ে ভয়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তখন তিনি অত্যন্ত স্নেহ করে আমার কান ধরে বললেন, তুই মনসুর আলীর ছেলে হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করিস; আমি ভয়ে ভয়ে বললাম- চাচা, আমি এখন থেকেই ছাত্রলীগ করব। এরপর আমি ছাত্রলীগ করি। যুবলীগ করেছি। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে যাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
ছাত্র রাজনীতি ছাড়ার পরে কিছুদিন যুবলীগের রাজনীতি করেন মোহাম্মদ নাসিম। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পরে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ১৩তম সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই কমিটিতে প্রথমবারের মতো জায়গা পান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন শহীদ এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম। প্রথমবারের মতো তাকে দলের যুব সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর অনুষ্ঠিত সকল সম্মেলনেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের যোগ্যতা দিয়েই স্থান করে নিয়েছেন মোহাম্মদ নাসিম।
এরপরের কমিটিতে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালের সম্মেলনের পরে তাকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালের সম্মেলনেও একই পদে ছিলেন। ওই সম্মেলন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছিল একটি। এরপর ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত ১৭তম ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৮তম সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের অনুষ্ঠিত ১৯তম সম্মেলনে পদোন্নতি দিয়ে তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতি নিধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়। এরপর ২০ ও ২১তম সম্মেলনেও তিনি একই পদে ছিলেন।
মোহাম্মদ নাসিম ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে প্রথম সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ ১ ও ২ আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি দুই আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন কিন্তু সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। এক/এগারোর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরে মোহাম্মদ নাসিম গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই সময়ে তার নামে একাধিক মামলা জটিলতার কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। পরিবর্তে তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয়া হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন তিনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম পুনরায় বিজয়ী হন।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে সরকার গঠনের পরে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়েন তিনি। তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি করা হয়।
আপনার মন্তব্য