সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৮:৩৭

নির্বাচনের জন্যে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড চায় বিএনপি

২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় বলে জানিয়েছে বিএনপি। তবে নির্বাচনে যাওয়ার আগে লেভেল প্লেইং ফিল্ড চায় দলটি।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে। প্রয়োজন নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ, যোগ্য ও সাহসী নির্বাচন কমিশনের। ইসির পরিচালনায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করার। সেজন্য তৈরি করতে হবে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।’

বর্তমানে বিরোধী দল নির্মূল করার যে প্রক্রিয়া চলছে দাবি করে ফখরুল বলেন এটা আগে বন্ধ করতে হবে।

ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণের শুরুতেই  ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ২০১৪এর ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের কথা বলেছেন, যা সঠিক নয়। ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। শতকরা পাঁচ ভাগ ভোটারও ভোটকেন্দ্রে যাননি। সারা দেশের মানুষ এবং বহির্বিশ্ব সেই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল।’

বিএনপির এ মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে এমনভাবে চিত্রায়িত করেছেন যে, সকল উন্নয়ন তাঁর দুই দফার সরকারের আট বছরেই হয়েছে। যা সঠিক নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে যে তিনটি সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই তিনটি সরকারের সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নতুন মাত্রা পায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা,খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজগুলো কোনও একটি বিশেষ সরকারের একক প্রচেষ্টার ফসল নয়। প্রধানমন্ত্রীর দাবি তাই অনৈতিক এবং শুধুমাত্র আত্মতুষ্টির প্রচেষ্টা।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকের বৈদেশিক রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সারা বিশ্বের ব্যাংকিং ইতিহাসে চাঞ্চল্যের স্থান পেয়েছে। সরকার ড. ফরাস উদ্দিন কমিটির রিপোর্ট নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। মনে হচ্ছে কোনও রাঘব বোয়ালের নাম আড়াল করতেই এ লুকোচুরি। আমরা দাবি করছি, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। যত ক্ষমতাধরই হোক দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হোক। লোপাটকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনা হোক।’

তিনি বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক থেকে  হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে, যা অনৈতিক।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হওয়ার নামে সরকার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ১৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে।রূপপুরের প্রস্তাবিত পারমাণবিক প্রকল্পের বর্জ্য  ফেরত নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। এই পারমাণবিক বর্জ্য বাংলাদেশে শত বছর ধরে সংরক্ষণ আদৌ সম্ভব নয়। আমাদের মত ঘনবসতিপূর্ণ জনাকীর্ণ দেশে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প স্থাপনের ভয়াবহতা কল্পনাও করা যায় না। তাছাড়া এ প্রকল্পের আর্থিক ও অন্যান্য কারিগরী দিকগুলোও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এ ধরনের ভয়াবহ প্রাণহানী ও সম্পদ বিধ্বংসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পূর্বে বিষয়টি আরও গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা অত্যাবশ্যক।’

মির্জা ফখরুল বলেন,  ‘পরীক্ষিত, জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলার জালে জড়িয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা, তিনবারের নির্বাচিত  সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিযার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সংকট চিহ্নিত করবেন এবং তা নিরসনে পথের সন্ধান দেবেন। সেটাই ছিল তাঁর জন্য রাষ্ট্র নায়কোচিত কাজ। তিনি তা না করে রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধুমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বলেছেন। আমরাতো নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে।  সেজন্যে প্রয়োজন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ একটি সহায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ, সাহসী, যোগ্য নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নির্বাচন।’  

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ অনেকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত