সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ মে, ২০১৭ ১৯:৪৩

ভিশন-২০৩০ ঘোষণা: প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার অঙ্গীকার

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি ‘স্বৈরচারী একনায়কতান্ত্রিক’ শাসনের জন্ম দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। ক্ষমতায় গেলে বিদ্যমান অবস্থার অবসানকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে বলে অঙ্গীকার করেন তিনি।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ নামের রূপকল্প ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, বিএনপির বিশ্বাস করে জনগণ সব উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। যেসব বাধা জনগণের মেধা, শ্রম, উদ্যোগ ও উৎসাহকে দমিয়ে দেয় সেগুলোকে দূর করে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি ‘ভিশন ২০৩০’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেছেন, সংবিধানের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা হবে। জাতীয় সংসদকে সব জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে জাতির কাছে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ জন্য সুনীতি, সুশাসন ও সুসরকারের সমন্বয় ঘটাবে বিএনপি। দলটি রাজনৈতিক সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংবিধানের এক-কেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কার করে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।’

দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপরে ন্যস্ত। এ ব্যবস্থা সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্বীকৃত রীতির পরিপন্থী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলদ্ধি করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এ ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। সংসদ বহাল রেখে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন, সংবিধানের কিছু নির্ধারিত বিষয় সংযোজন, পরিবর্তন, রহিত করে। অন্য কোনও পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য করার বিধান তৈরি কেরেছে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্তসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে তারা। বিএনপি এসব বিতর্কিত অগণতান্ত্রিক বিধান পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবাধিানিক সংস্কার করবে।’

এছাড়া বিএনপি গণভোট ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার’ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে জাতিকে পৌঁছাতে দৃঢ প্রতিজ্ঞ। এজন্য সুনীতি, সুশাসন এবং সুসরকারের সমন্বয় ঘটাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীরা সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী, ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও কর্মকর্তা, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা, গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবদুল মান্নান, খন্দুকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, হারুন উর রশিদ, ডা. এ. জেড এম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, এ জেড মোহাম্মদ আলী, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নাল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভূইয়া প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত