সিলেটটুডে ডেস্ক :

০৪ মে, ২০২৪ ১৪:০৫

কঠোর বার্তা দিয়েও নরম আওয়ামী লীগ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

ফাইল ছবি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বজনেরা প্রার্থী হলেও দলীয় ব্যবস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে না মন্ত্রী-এমপিদের। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অবস্থান থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ।

দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এমন আভাস দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এমন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তবে বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আলোচনা হতো। তবে সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেছেন, মন্ত্রী-এমপির প্রার্থী হওয়া স্বজনেরা বাড়াবাড়ি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপিবিহীন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে কাউকে দলীয় সমর্থন ও প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করার জন্যও বলা হয়। তবে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর দেখা যায় মন্ত্রী-এমপিদের ৩০ জনের বেশি স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। নাটোরের সিংড়ায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল কবীর রুবেলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। এরপরই আওয়ামী লীগ নড়েচড়ে বসে। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়। রুবেল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন দেলোয়ার। তবে মন্ত্রী-এমপিদের আর কোনো স্বজন সরেননি।

গত ১৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর অনির্ধারিত বৈঠকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়। স্বজন প্রার্থী থাকা মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেন। ওই বৈঠক থেকেই নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানানো হয়। একরামুল করিমের ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলায় ও শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুরের সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনেরা নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলে আওয়ামী লীগ। তবে তা কাজে দেয়নি। দলটির সূত্র বলছে, তাঁদের তালিকা অনুযায়ী ৫০ মন্ত্রী-এমপির স্বজন নির্বাচন করছেন। গণমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ২০ এমপির ৩০ স্বজন এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এমপির স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম ধাপের ভোট ৮ মে এবং দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে।

এদিকে তৃতীয় ধাপেও রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজনেরা। এই ধাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন ভাগনে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজন ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন কঠিন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া নেতাদেরও তো একসময় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে উপজেলা নির্বাচনে কেউ তো বিদ্রোহী প্রার্থী হননি।

তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, উৎসবমুখর ও অর্থবহ করার স্বার্থে আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সব সময় প্রকাশ্যে হয় না, অপ্রকাশিতভাবেও হয়। সুতরাং নির্দেশ অমান্য করার শাস্তি প্রয়োগ হবে সময়ের ধারাবাহিকতা।

আওয়ামী লীগের সাতজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে নির্দেশ অমান্যকারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ২৮ এপ্রিলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আলোচনা হতো। মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা বৈঠকে উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, দল নির্দেশ না দিলে ৫০ শতাংশ উপজেলাতেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনেরা প্রার্থী হতেন। তাঁদের অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতেন। এখন তা হচ্ছে না। এটিই দলের সাফল্য। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় স্বজনদের সরানো যায়নি। যেমন নোয়াখালীতে চার মন্ত্রী-এমপির স্বজন ভোটে আছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমাদের দলের প্রধান (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) চাইছেন উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক। এতে বেশি প্রার্থী হলে বেশি অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হবে। তা বাধাগ্রস্ত না করতে তিনি বলেছেন। এখন এমপি-মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনেরা প্রার্থী হয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফ্যামিলি ফর্মুলা কী নিজে, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী, এই তো? এর বাইরে তো পরিবার হয় না।

গতকাল শুক্রবার এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বজন বলতে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে সন্তান ও স্ত্রীকে বুঝিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গতকাল নির্বাচন থেকে তাঁর ছোট ভাইয়ের সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি আমি কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেব না। এটা আপনারা বাস্তবে দেখবেন।’

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজন ভোটে রয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ প্রত্যাহার করতে চাইলে নির্ধারিত তারিখের পরও করতে পারবে। আমাদের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত