সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ২১:৩৯

প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফেরা সুদূর পরাহত: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, অভিযোগ ওঠার পর দেশে ফিরে এসে পুনরায় প্রধান বিচারপতির চেয়ারে এস কে সিনহার বসা সুদূরপরাহত।
 
শনিবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবে আলম একথা বলেন।

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্য- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য না হলে কি এসব কথা বলা হতো?

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আছে বলেও জানান রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে তার বাসভবনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন- তা বিভ্রান্তিমূলক। দেশবাসীর এই বিভ্রান্তি দূর করতে পাঁচ বিচারপতির দেয়া বিবৃতিটির প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, তার (প্রধান বিচারপতি) বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর দেশে ফিরে এসে পুনরায় প্রধান বিচারপতির চেয়ারে বসা সুদূরপরাহত।

মাহবুবে আলম বলেন, সুপ্রিমকোর্টের এ বিবৃতির মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে যে, আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করতে রাজি হননি। তার সহকর্মীরাই তার সঙ্গে বসতে চান না। অন্য বিচারপতিরা যদি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে বিচারকার্য পরিচালনা না করেন, তবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। অন্যরা না বসলে তিনি একা বসে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারবেন না। এভাবে দেশ চলতে পারে না। তাই বাস্তব অবস্থায় তার ফিরে এসে পুনরায় বসা সুদূরপরাহত।

তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট থেকে শনিবার যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে এটি আপিল বিভাগের বর্তমান পাঁচ বিচারপতির পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এ বিবৃতিতে রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষর করেছেন। এই বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজন ছিল। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে যে নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছেন এবং লিখিত একটি বিবৃতি তিনি সাংবাদিকদের দিয়ে গেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীকে এ তথ্য জানানো প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি। সেটা উনারা এখানে স্পষ্ট করে বলেছেন।

বিবৃতির শেষ অংশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সে পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে এর আগে সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য বা বিবৃতি  দেয়া হয়নি। কাজেই প্রধান বিচারপতি যে বিবৃতি দিয়ে গেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্ট যদি বসে থাকতেন তাহলে দেশবাসী একটি বিভ্রান্তিতে পড়ে যেত। দেশবাসীর কাছে এসব ঘটনা স্পষ্ট করার প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি।’

প্রধান বিচারপতি যাওয়ার সময় বলে গেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শুধু রুটিন কাজগুলো করবেন- তা সঠিক নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তিনিও কিন্তু সাংবিধানিক পদেই আছেন। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সুতরাং বিচারালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত, বিচারিক কাজ, বেঞ্চ গঠনসহ যাবতীয় কাজ তিনি করবেন। সব দায়িত্ব তিনি পালন করবেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা তো যৌক্তিক কোনও কথা হলো না যে একজন প্রধান বিচারপতি যখন দেশের বাইরে থাকবেন তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নীতিগত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এ বিবৃতির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাজ নিয়ে যে বিতর্ক ছিল তার অবসান হলো বলে আমি  মনে করি’।

সুস্থ-অসুস্থ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যখন চিঠি লিখেছিলেন তিনি নিজেকে অসুস্থ বলেছিলেন। আর গতকাল (শুক্রবার) বিদেশ যাওয়ার সময় বলেছেন তিনি সুস্থ। দুটিই তার বক্তব্য।

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তাতে তার শপথ ভঙ্গ হয়েছি কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এখনও এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলেই কেবল শপথ ভঙ্গ হয়।

অভিযোগ ওঠার পর প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার প্রয়োজন আছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ধারণা আমরা মেনে নিইনি। এ কারণেই তো ষোড়শ সংশোধনী মামলায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার  প্রস্তুতি নিয়েছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত