নিউজ ডেস্ক

১১ জুন, ২০১৫ ১৬:৪৫

‘সিন্ডিকেট’ খপ্পরে ছাত্রলীগ

চার বছর পর সম্মেলন এলেও কর্মীদের মতামত এড়িয়ে ‘সিন্ডিকেট’র মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণের শঙ্কায় ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশীদের অনেকে।

আগামী ২৫ ও ২৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঘিরে এরইমধ্যে ‘সিন্ডিকেট’র তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের কয়েকজন নেতা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনে কর্মীদের মতামত ছাড়াই ‘উপর’ থেকে নেতৃত্ব ঠিক করে দেওয়ায় শঙ্কা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক পদ প্রত্যাশী।

এছাড়া বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন ঘিরেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংঠনের এক নেতা বলেন, “মিছিল-মিটিং সবই করি, কিন্তু এতো পরিশ্রম করে কোনো লাভ নেই। এখন নেতা হইতে যোগ্যতা লাগে না, ‘সিন্ডিকেট’ যাকে নেতা হিসেবে দেখতে চাইবে সে-ই নেতা হবে।”

সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিসহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা এই ‘সিন্ডিকেটবাজিতে’ জড়িত বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন।

ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগও তাদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন।

“পৃথিবীর সব জায়গায় সিন্ডিকেট রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না,” বলেন তিনি।

২০১১ সালের ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন বদিউজ্জামান সোহাগ ও  সিদ্দিকী নাজমুল আলম।

গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর হলেও এই কমিটির বয়স ইতোমধ্যে প্রায় চার বছর হতে চলেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।

এমনকি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছাত্রলীগের সম্মেলনের কথা বলেছেন। এরই ধারাবাহিতকায় গত ৮ মে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৮তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় পদ-প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। নিজের পক্ষে সমর্থন আদায়ে দিনরাত দৌঁড়াচ্ছেন কেউ কেউ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনেও নেতাকর্মীদের বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংগঠনটি দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের। এবার এখনও কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানা যায়নি।

তবে সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে দুটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।

সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ওবায়দুল কাদেরের মতানুসারী হিসেবে সংগঠনটির সাবেক নেতা লিয়াকত শিকদার, এনামুল হক শামীম, মাহফুজ হায়দার রোটন, গোলাম সরয়ার কবীর এবং বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরিচিতি রয়েছে বলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

অপরপক্ষে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম বাবু, মাহমুদুল হাসান রিপন ও মারুফা আক্তার পপি সক্রিয় বলে জানা গেছে।

গত মাসের শেষ দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের পর নতুন কমিটি ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় লিয়াকত শিকদার ও বদিউজ্জামান সোহাগের বাসার সামনে গুলিবর্ষণ এবং বাড়ির ফটকে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।  

মহানগর দক্ষিণের সদ্য বিদায়ী সভাপতি আনিসুর রহমান আনিসের অনুসারীরা ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা তাদের ‘অনুসারীদের’ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনতে ‘সিন্ডিকেটবাজি’ করেন বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির একাধিক নেতাকর্মী।

তবে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন “ছাত্রলীগে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ছাত্রলীগের অভিভাবক আছে। সংগঠনের দেখভালের দায়িত্ব তাদের।

“যারা যোগ্য, আত্মোৎসর্গকারী, তাদের মধ্যে থেকে নেতা নির্বাচন করা হয়। তারাই নেতৃত্বে আসেন।”

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী

কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঘিরে সংগঠনের শীর্ষ পদ পেতে অনেকে তৎপর রয়েছেন।

এদের মধ্যে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আল আমিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান বিপুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু ও আপেল মাহমুদ সবুজ, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কাজী এনায়েত, ক্রীড়া সম্পাদক আবিদ আল হাসান, সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম ও জাকির হোসেন, আইন সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অরূপ সরকার, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম জুয়েল, উপ-আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, উপ-নাট্য সম্পাদক কাঞ্চন, উপ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক শেখ আসমান, উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব হাসান পলাশ, উপ-প্রচার সম্পাদক আরিফুজ্জামান লিমন, উপ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক এস এম আব্দুর রহিম তুহিনের নাম রয়েছে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি কালাম মোহাম্মাদ নাসের (রুবেল), সহ-সভাপতি আরিফুজ্জামান রোহান, জগন্নাথ হলের সভাপতি সুপ্রীয় কুণ্ডু রাজেষ,  সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের  নেতা মো. আশরাফ আলী তাপস, মিজানুর রহমান রুবেল, সাকলাইনও সংগঠনের শীর্ষ পদ প্রত্যাশীদের দৌঁড়ে আছেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদপ্রত্যাশী

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বৃহস্পতিবার। সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবন-বৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এজন্য একটি কমিটিও করা হয়।

ওই কমিটির নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী বলেন, ১৯০জন প্রার্থী তাদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

“জমাও নিয়েছি কিন্তু বাছাই করা হয়নি। বাছাই হলে কয়েকজন বাদ যেতে পারেন।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত