সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

০২ এপ্রিল, ২০১৮ ০২:০৩

পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধের দাবিতে সিলেটে সনাকের মানববন্ধন

পাবলিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বন্ধের দাবিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।   

আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ১ এপ্রিল সকাল এগারটায় ঢাকা ও টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সারা দেশের ৪৫টি সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এলাকায় একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সিলেটের উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখ সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বিগত কয়েক বছর যাবৎ পাবলিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়া বড় ধরনের দুর্নীতি এবং এটি শিক্ষা খাতের জন্য শুধু সুশাসনের চ্যালেঞ্জই নয়, মেধাভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অশনিসংকেত। প্রশ্ন ফাঁসের ফলাফল ও প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশ্ন ফাঁস রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে জনমত গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে সনাক।

“শিক্ষা খাতে সুশাসন ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ: চাই পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ” শীর্ষক এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইয়েস সদস্য বজলুর রহমান, সনাকের ইয়েস উপ-কমিটির আহ্বায়ক এনায়েত হাসান মানিক, টিআইবি সিলেট ক্লাস্টারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার চিত্ত রঞ্জন রায়, সনাক সদস্য ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ব্যারিষ্টার আরশ আলী ও সনাক সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম।

প্রশ্ন ফাঁসের কারণ, ফলাফল ও প্রভাব এবং প্রশ্ন ফাঁস রোধে সনাক-টিআইবি’র সুপারিশ সম্বলিত ধারণাপত্র পাঠ করেন সনাক সিলেটের ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্য শারমীন আখতার। সঞ্চালনায় ছিলেন টিআইবি সিলেটের এরিয়া ম্যানেজার কমল কৃষ্ণ সাহা।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিতি ছিলেন আয়কর উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ্যাডভোকেট সুপ্রিয় চক্রবর্তী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সনাক সহ-সভাপতি এ. কে শেরাম, সনাক সদস্য এ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সৈয়দা শিরীন আক্তার, এ্যাডভোকেট মোহিত লাল ধর, সমিক সহিদ জাহান, লক্ষ্মীকান্ত সিংহ, স্বজন সদস্য রামেন্দ্র কুমার বড়ুয়া ও অনিল কৃষন সিংহ। সনাক সিলেটের ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপের সদস্য, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ ও সিলেট এইডেড স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।
   
মানববন্ধনে প্রশ্ন ফাঁস রোধে সনাক-টিআইবি’র পক্ষ থেকে ৯টি সুপারিশমালা উপস্থাপন করা করা হয়। ৯টি সুপারিশমালা গুলো হল-

১) ‘পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) (সংশোধন) আইন, ১৯৯২’ এর ৪ ধারা পুনরায় সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা পূর্বের ন্যায় সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রণয়ন এবং নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা;

২) কোচিং সেন্টার নিষিদ্ধকরণে সরকারের ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ এর অস্পষ্টতা দূর করা এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা;
 
৩) প্রশ্ন ফাঁস রোধ ও সৃজনশীল পদ্ধতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গাইড বইয়ের আদলে প্রকাশিত সহায়ক গ্রন্থাবলী বন্ধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা;

৪) তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তদারকি বাড়ানো ও প্রচলিত আইনের অধীনে শাস্তি নিশ্চিত করা;
 
৫) ধাপ কমিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণের কাজটি পরীক্ষামূলক-ভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা এবং পরবর্তীতে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা;

৬) প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে গঠিত যেকোনো তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

৭) শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনাগত যেকোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা;

৮) প্রশ্ন ফাঁস রোধে বহু-নির্বাচনী প্রশ্ন ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে তুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা;

৯) পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট রাখা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত