এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অন্তত ৮০ হাজারের বেশি রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক এসেছেন সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপেকে বরণ করতে। রিয়াল মাদ্রিদের সাদা জার্সিতে নাম্বার নাইন জার্সি পরে এসেছে ন্সামনে। তুমুল করতালি দাঁড়িয়ে দর্শকেরা বরণ করে নিল তাকে।

এমবাপে যখন টানেলের সিঁড়ি ধরে এগুচ্ছিলেন তখনই গর্জনে ফেটে পড়েছে বার্নাব্যুর গ্যালারি। স্লোগান ধরেছে এমবাপের নামে। কিছুক্ষণ পর এমবাপে যখন মঞ্চে কথা বলার মাঝে ‘আলা মাদ্রিদ’ বলে উঠলেন, তখন সমর্থকদের গর্জনে যেন কেঁপে ওঠেছিল এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু।

রিয়ালে যোগ দেওয়া যেমন কিলিয়ান এমবাপের স্বপ্ন ছিল। মাদ্রিদের ক্লাবটিও ২০১৭ সাল থেকে ছুটছিল তার পিছু। প্রায় প্রতি মৌসুমে দলবদলের বাজারে গুঞ্জন ওঠেছে, পিএসজি ছেড়ে তার রিয়ালে যোগ দেওয়ার। এভাবে কেটে গেছে ছয় বছর।

২০২২ সালে জুনে এমবাপের রিয়ালে যোগ দেওয়া যখন নিশ্চিত মনে হচ্ছিল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর হস্তক্ষেপে পিএসজিতে থেকে যেতে রাজি হন তিনি। শেষ পর্যন্ত গত জুনে ‘ফ্রি এজেন্ট’ হয়ে পড়া এমবাপের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে রিয়াল। এরপর অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার।

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউরো) শেষে আজ সে আনুষ্ঠানিকতাও সারল রিয়াল। বার্নাব্যুতে সমর্থকদের সামনে ঐতিহ্যবাহী ৯ নম্বর জার্সিতে এমবাপেকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিল বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম আগেই জানিয়েছিল, এমবাপেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এই অনুষ্ঠানে বার্নাব্যুর কোনো সিট খালি থাকবে না। ৮০ হাজার আসনের এই স্টেডিয়ামে সিট তো নেই–ই, স্টেডিয়ামের বক্সগুলোও খালি নেই বলে আজ অনুষ্ঠান শুরুর আগে জানিয়েছিল স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস। অন্তত ১০০ সংবাদকর্মীও উপস্থিত ছিলেন এই মহাযজ্ঞে। স্টেডিয়ামের ভেতর মাঠে তৈরি করা হয়েছিল নীল রঙের মঞ্চ। তার ওপরে সারি সারি করে রাখা রিয়ালের চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। দর্শক আসনে এমবাপের মা ফাইজা লামারিকেও চোখ মুছতে দেখা গেল।

রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ এমবাপেকে মঞ্চে ডেকে আনার পর সেখানে উপস্থিত ছিলেন রিয়াল ও ফ্রান্সের কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান। ফ্রান্সের এই সময়ের সেরা তারকাকে দলে ভেড়ানোর অনুষ্ঠানে সেই দেশের ইতিহাস–সেরা ফুটবলারকে এর বাইরে রাখার কথা ভাবেনি রিয়াল।

কিলিয়া এমবাপে এরপর নিজের কথা বললেন, ‘এখানে আসতে পেরে অবিশ্বাস্য লাগছে। অনেক বছর ধরেই রিয়ালে খেলার স্বপ্ন দেখেছি, আজ সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। সুখী লাগছে। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে ধন্যবাদ। তিনি প্রথম দিন থেকেই আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। অনেক কিছুই ঘটেছে...কিন্তু ধন্যবাদ। এখানে আসার জন্য যারা সাহায্য করেছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ। (গ্যালারির প্রতি) আমার পরিবারকে দেখছি। মা কাঁদছেন (বলে রিয়ালের ব্যাজে চুমু খান এমবাপে)।’

পিএসজিতে সাত মৌসুম কাটানো এমবাপে এরপর রিয়ালে নিজের লক্ষ্য নিয়ে বললেন, ‘শৈশব থেকে একটি স্বপ্নই দেখেছি এবং এখানে আসতে পারাটা আমার জন্য অনেক কিছু। এখন আমার সামনে আরেকটি স্বপ্ন। এই ক্লাবের ইতিহাসের অংশ হতে চাই। এই ক্লাব ও ব্যাজের জন্য আমি নিজের জীবন উৎসর্গ করব।’

২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড এরপর বললেন, ‘ফুটবল ইতিহাসে সেরা ক্লাবটির খেলোয়াড় হয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে পেরে ভালো লাগছে...এখন সবাই একসঙ্গে বলি ১, ২, ৩, আলা মাদ্রিদ!’ গ্যালারিতে ৮০ হাজার পেরিয়ে যাওয়া সমর্থকের দলও সঙ্গে সঙ্গে ‘আলা মাদ্রিদ’ বলে সমস্বরে গর্জন করে ওঠেন।

মঞ্চে কথা বলা শেষে মাঠে নেমে কয়েকটি বল নিয়ে কসরত দেখান এমবাপে। কিছু বল কিক মেরে গ্যালারিতেও পাঠান। বলটি স্যুভনির হিসেবে রাখতে সমর্থকদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়েছে। এর মধ্যে গ্যালারির কাছে গিয়ে এক খুদে সমর্থকের হাতে বলও তুলে দিয়েছেন।

কোচ কার্লো আনচেলত্তির অধীনে গতকাল থেকেই অনুশীলন শুরু করেছে রিয়াল। এমবাপে কয়েক দিন পর অনুশীলনে যোগ দেবেন।