সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ মে, ২০১৬ ২০:৩৭

কে এই সোনা চৌধুরী?

ভারতে মেয়ে ফুটবলারদের জাতীয় দলে সুযোগ পেতে হলে টিম ম্যানেজমেন্টের লোকদের মনোরঞ্জন করতে হয়। তাদের সঙ্গে রাত কাটাতে হয়। জাতীয় নারী ফুটবল দলে জায়গা পেতে হলে কর্মকর্তাদের শয্যাসঙ্গিনীও হতে হয়। এ ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন ভারতের নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক সোনা চৌধুরী। এ নিয়ে তিনি একটি বইও লিখেছেন।

তাকে নিয়ে যখন দিল্লির টিভি চ্যানেলে হইচই, তখনই ঘটনার অন্য রকম মোড়৷ জাতীয় দলের বেশ কিছু মেয়ে ফুটবলার প্রশ্ন তুললেন, কে এই সোনা চৌধুরী? কোনও ফুটবলারই তাকে চিনতে পারছেন না৷ ভারতের নারী ফুটবল দলের কর্তারাও সব শুনে বিভ্রান্ত৷ সোনা চৌধুরী বলে পরিসংখ্যানে কারও নাম নেই৷

জাতীয় দলের এক প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, 'ওর গলা টিপে মেরে ফেলা উচিত, এত ভুলভাল মন্তব্যের জন্য৷ আর এতো দিন খেলাটার সঙ্গে আছি, ওকে তো চিনিই না৷'

যে বই নিয়ে হইচই, তাতে কী রয়েছে? সমাজের সর্বত্রই মেয়েদের যেমন তীব্র প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, খেলাধুলোর দুনিয়াও তা থেকে বাদ যায় না৷ খারাপ ব্যবহার, যৌন নিগ্রহ, অর্থ নিয়ে টিমে সুযোগ করে দেওয়ার মতো নানা অভিযোগ কখনও সামনে আসে, কখনও আসে না৷ কিন্তু, এই সব অভিযোগ যে মন গড়া নয়, তা-ই উঠে হল সোনা চৌধুরির বই 'গেম ইন গেম'-এ৷ যা নিয়ে ভারতীয় ফুটবল বিশ্বে আলোড়ন৷ যে বইয়ের পাতায় পাতায় ধরা দিয়েছে, এক মেয়ে ক্রীড়াবীদের দৈনন্দিন লড়াই, তার ব্যাথা এবং অন্ধকারের মধ্যে বড় হওয়ার গল্প।

সম্প্রতি বেনারসে একটি অনুষ্ঠানে এই বই প্রকাশিত হয়৷ প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিলেন হরিয়ানার মেয়ে সোনা৷ তারপর থেকে সংবাদ মাধ্যমে সোনার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি৷ সোনা বলেন, 'আমি মেয়ে ক্রীড়াবীদদের জন্য লড়ছি৷ এই বই সেই প্রকল্পরই অংশ৷ আমার বইয়ে ৯০ শতাংশ তথ্য এবং ১০ শতাংশ গল্প৷ আমি জীবনভর যে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, যে ভাবে আমার সহ খেলোয়াড়দের হেনস্থা হতে দেখেছি, তার উপর ভিত্তি করেই এই বই৷' তিনি বলেন, 'আমার লড়াই সিস্টেমের বিরুদ্ধে৷ তা বলে এই সিস্টেমের সবাই খারাপ লোক নন৷ কিন্তু দু'একজন এমন লোক আছেন, যারা এই সিস্টেম খারাপ করে দেন।'

সোনার বক্তব্য, 'আমরা অধিকাংশ সময় পরিবারের বাইরে হস্টেলে থাকতাম৷ কোচ ছিলেন আমাদের গুরুর মতো৷ কিন্তু যাকে আমরা গুরু হিসেবে মানতাম, তিনি যদি অসভ্যতা করেন, তাহলে কার কাছে যাবো? মেয়েরা কিন্তু ছোট থেকেই ভালো স্পর্শ এবং খারাপ স্পর্শের মধ্যে ফারাক করতে পারে৷ কোচের কাছ থেকে এমন খারাপ ব্যবহার পেলে আমরা কিছু বলতে পারতাম না৷ টিমে ঢোকার জন্য অনেক সময়ই আমাদের অনেককে আপোস করতে হতো৷ সেসব কথাই এখানে লিখেছি৷'

সোনা বলেছেন, 'শুধু জাতীয় স্তরেই নয়, রাজ্য স্তরেও তাদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে৷ যেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হত৷ যখন জাতীয় দলের দেশের বাইরে কোনো খেলা থাকে তখন কোচ ও সচিব নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই কক্ষে থাকেন। প্রতি রাতেই কোনও না কোনও খেলোয়াড়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। তা না হলে দলে খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না।'

ভারতের একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ১৯৯৫ সালে জাতীয় দল অভিষেক হয় সোনা চৌধুরীরর। ৯৬ সালে তিনি অধিনায়ক নির্বাচিত হন। পায়ে চোটের কারণে ১৯৯৮ সালেই শেষ হয়ে যায় তার ক্যারিয়ার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত